কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি - এটি কোথায় কিভাবে ব্যবহৃত হয়

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  সাধারণত ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে দুই ধরনের হয়ে থাকে, প্রথমটি প্রযুক্তিগত দ্বিতীয়টি বৈজ্ঞানিক। প্রযুক্তিগত এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কম্পিউটার ডিভাইস ব্যবহার করে অতি স্বল্প সময়ে নির্ভুলতার সাথে কাজ করিয়ে নেওয়া। বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন, এটিএম মেশিন পুরো ব্যাংকের শাখার নির্ভুলভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি - এটি  কোথায় কিভাবে ব্যবহৃত হয়
এই আর্টিকেলে আমরা জানার চেষ্টা করব যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট কি,। এটি কিভাবে কাজ করে, এটির ভবিষ্যৎ কেমন, এর সুবিধা-অসুবিধা এবং এর প্রভাব ইত্যাদি। তাই ধৈর্য সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

ভূমিকা

বর্তমানে যান্ত্রিক রোবটরা মানুষের মত চিন্তা করে আসছে মানুষের মতো আগ্রহী হয়ে মানুষকেই আক্রমণ করছে। বিজ্ঞানী কল্পকাহিনী নিয়ে সিনেমা বই অনেকবার এর ব্যবহার দেখেছি। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি গোটা পৃথিবীকেই দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিজ্ঞানীরা অনেক কিছু উদ্ভব করেছেন যেসব একসময় ছিল শুধু কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ।
 
কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এমন সব যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন যেগুলো যন্ত্রমানবের সঙ্গে তুলনা করে। উদাহরণস্বরূপ, অত্যন্ত জটিল গাণিতিক হিসাব সাধারণ একটি ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে আমরা সেকেন্ডেই এর সমাধান করতে পারি। আবার আবার বিমান চালানোর ক্ষেত্রে অতি দক্ষতার সহিত  অটো পাইলট এর দায়িত্ব পালন করছে। এই বুদ্ধিমত্তার বিষয়টিকে স্বাভাবিক বুদ্ধিমতা বলা যায় না। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি

মানুষের চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে তা যন্ত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত করার মাধ্যমকে কৃত্রিম বুদ্ধিমতা বলা হয়। এটি একটি কম্পিউটার বিজ্ঞানের শাখা যেখানে মানুষের চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিমতাকে কম্পিউটার ডিভাইস দ্বারা পরিচালনা করার চেষ্টা করা হয়।

ডিভাইসকে মিমিকস স কগ্নেটিক এককে রূপান্তরিত করা হয় যেন কম্পিউটার মানুষের মতো করে ভাবতে পারে। এই বিষয়ে ইতিমধ্যে আমরা অনেক প্রমাণ দেখেছি এবং ভবিষ্যতে আরো অনেক কিছু দেখতে পাবো বলে আশাবাদী।

এ আই কোথায়  ব্যবহৃত হয়

ওয়েবসাইট, কম্পিউটার সফটওয়্যার, রোবট ইত্যাদি। তাছাড়াও বিভিন্ন প্রকার মেশিনে এই ব্যবহার হয়। মাইক্রোসফট, গুগল এবং অ্যাপল সহ পুরো বিশ্বের ছোট থেকে শুরু করে বড় কোম্পানিগুলো এই প্রযুক্তির সহনশীল হচ্ছে। বর্তমানে কোন ব্যক্তি বেশি বেশি কাজ করলে ক্লান্ত হয়ে পড়ে যার ফলে একটু বিরতির প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু এটি এমন এক প্রযুক্তি যার কোন বিরতির প্রয়োজন নেই।
একই সঙ্গে অতি অল্প সময়ে বেশি কাজ দ্রুত করার পাশাপাশি অনেক কিছু শিখতে পারে। বিভিন্ন জায়গায় এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে যেমন ভিডিও গেম, স্মার্ট গাড়ি, ডাটা সেন্টার এবং সাইবা নিরাপত্তা ইত্যাদি। তাছাড়াও বিভিন্ন মার্কেটিং, রিসার্চ, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য এবং টেলিকমিউনিকেশন সহ আরো বিভিন্ন পর্যায়ে এর ব্যবহার রয়েছে। বৈজ্ঞানিকরা পরিপূর্ণভাবে একটি না দেখাতে পারলে, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি প্রায় সকল কাজেই নিয়ন্ত্রিত হবে।

এ আই এর প্রভাব

  • শিক্ষা ক্ষেত্রে এর কাঠামো তৈরিতে এট সাহায্য করে। এর সরঞ্জাম কম্পিউটারাইজ গ্রেডিং এর সুবিধা পাওয়া যায়। যার ফলে শিক্ষকের অনেক সময় বেঁচে যায় এবং শিক্ষার্থীদের মনোযোগী হতে সাহায্য করে। শিক্ষা ক্ষেত্রে মানবকল্যাণে এটি ব্যবহার করে থাকে অনেক বেশি নিখুঁত করতে সক্ষম হওয়া যায়।
  • যানবাহন ও পরিবহন ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমতার প্রভাব রয়েছে। এর বড় ভূমিকা হচ্ছে  স্ব-চালিত গাড়ির উন্নয়নে। এটি রাস্তার নেভিগেশন করে থাকে কৃষিবিশন এবং কম্পিউটার ব্যবহার করার মাধ্যমে। তাছাড়াও এটি ট্রাফিক জ্যাম কমাতে, নিরাপত্তা বাড়াইতে এবং গাড়ির জ্বালানি খরচ ইত্যাদি ক্রমাগত কমাইতে সাহায্য করে। যার ফলে পরিবহন দক্ষতাকে আরো সুন্দর করে তোলে।
  • গ্রাহক পরিষেবা এবং ই-কমার্সে এর প্রভাব রয়েছে। চ্যাট বট, ডিজিটাল ক্রয় এবং অনলাইন সুপারিশ ইত্যাদি প্রেজেন্ট করছে। যেমন পণ্য ক্রয় বিক্রয় এর জন্য বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমতার চ্যাটবন্ডগুলো গ্রাহককে তথ্য প্রদান করে গ্রাহকের সন্তুষ্টির কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • স্বাস্থ্য সেবায় এর প্রভাব রয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিগত এর মাধ্যমে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে এটি ভালো কাজে আসে। এটি ওষুধ আবিষ্কার করতে, নতুন ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি সাহায্য করে।

এ আই এর ভবিষ্যৎ কি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা্র ভবিষ্যৎ হচ্ছে বিপদজনক বা ক্লান্তিকর কাজগুলোকে প্রতিস্থাপন করা। এর উৎপাদনশীলতা আমাদের কার্যক্ষেত্র কে বৃদ্ধি করতে পারে যা মানুষকে বেশি বেশি কাজে উপকৃতভাবে গড়ে তুলবে। এজন্য সেসব কাজগুলোতে মনোনিবেশ করে মুক্ত করা হচ্ছে যার জন্য তারা আরো বেশি সজ্জিত যেমন সহানুভূতি প্রয়োজন ও সৃজনশীলতাও প্রয়োজন।
  • জটিল অবস্থা অনুধাবন করে সেটি পর্যালোচনা করার ক্ষমতা রাখে।
  • যে কোন বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করে।
  • সমস্যার সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখে।
  • ভাষা বোঝার ক্ষমতা এবং নতুন অনেক  জ্ঞান অর্জন করার ক্ষমতা রাখেন।
  • বিভিন্ন বিষয়ে অনুধাবিত করে নতুন পরিস্থিতিকে নতুনভাবে পর্যালোচনার করার ক্ষমতা রাখে।

এ আই এর সুবিধা অসুবিধা

সুবিধা
  • এই প্রযুক্তির অন্যতম একটি সুবিধা হচ্ছে অতি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ মানুষের বিপরীতে পরিপূর্ণ ভাবে করানো যায়।
  • অতি দ্রুততার সাথে সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমতার ব্যবহৃত হয়।
  • মানুষের মস্তিষ্কের তুলনায় অনেক বেশি তথ্য বহন করতে পারে।
  • তারা নির্দ্বিধায় যুক্তিসঙ্গত বা যৌক্তিকভাবে চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
  • বর্তমানে এর সাহায্যে ফুটবল ক্রিকেট ব্যাচ বল দাবা ইত্যাদি খেলার ফটোগ্রাফি করা হচ্ছে। এটি দ্বারা খেলাধুলার প্রশিক্ষণও দিতে সক্ষম হয়।
  • এটি দ্বারা চিকিৎসা ক্ষেত্রে যেমন অপারেশন রেডিয়েশন জেরি ইত্যাদি তার প্রতি সহজেই করা যাচ্ছে।
  • এর ব্যবহারে কোন প্রকার ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বা ত্রুটি একদমই নেই।
অসুবিধা
  • মেশিন মানেই ধ্বংসের একটি অংশ। প্রতিটা জিনিসেরই যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি কিছু অসুবিধা রয়েছে। মানসিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে  মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে।
  • এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো মেশিন পর্যায়ে কাজ করার ফলে বর্তমানে এর বেকারত্বের হার বেড়েই চলেছে যার ফলে দেশের শ্রমিক কর্মহীন করে পড়ছে।
  • এর সাহায্যে যেমন অতি অল্প সময়ে দ্রুততার সাথে কাজ করানো সম্ভব হয় ঠিক ভুল প্রোগ্রামিং দিয়ে অন্যান্য ত্রুটির কারণে এরা মানুষের জন্য বিপদে মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।
  • এছাড়াও এর ভুল ব্যবহারে অনেক বেশি  ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ আই কি মানুষের বিলুপ্তির কারণ হবে 

উন্নত অবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। গবেষকদের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে, এটি ভবিষ্যতে নিজস্ব কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এসব আকাঙ্ক্ষা একদমই ছেড়ে দেওয়ার নয়। এই প্রযুক্তিকে এ ধরনের উদ্দেশ্য সাধনার সম্মুখীন হতে হলে এ  প্রযুক্তিকে অনেক উন্নয়নশীল হতে হবে। এছাড়া উন্নয়নের সাথে উদ্বেগটাও আরও বেড়ে যাবে। যার ফলে আরো বেশি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
এর ঝুঁকি মূল্যায়ন করে ভারসাম্য বজায় থাকতে পারা ও মানিয়ে নিতে পারা এক ধরনের প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে, যেমন যুক্তরাজ্যের 'লাইট টাচ' নামের নীতি গ্রহণ ইতিমধ্যে গ্রহণ করছে। তাদের এই নীতিমালার আওতায় আইন কানুন দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমতার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হবে। তবে এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কঠোরভাবে নীতির পথে অগ্রসর হচ্ছে। পরিশেষে, এর ঝুঁকি বিবেচনায় বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইন পরিচালনা করার কথা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

উপসংহার

বর্তমানে পুরো বিশ্বে এর ব্যবহার বহুলভাবে প্রচলিত রয়েছে। আমি যদি আপনাকে প্রশ্ন করি যে আপনি কি কখনো কোন মানুষ ছাড়া যানবাহন চলতে দেখেছেন? আবার মানুষ ছাড়া বিশাল বিশাল যন্ত্রপাতি বা কারখানা তৈরি করতে দেখেছেন? উত্তরে সবাই বলবেন যে হ্যাঁ আমরা এসব দেখেছি। এই  প্রযুক্তি  অনেক কাজে আসে। সুবিধার পাশাপাশি কিছুটা অসুবিধা থাকলেও এই প্রযুক্তি বিভিন্নভাবে আমাদের অনেক কঠিন কাজকে সহজতার করছে। তাই আমার চেষ্টা করব প্রত্যেকটা জিনিস কে সঠিক এবং কার্যকরীভাবে যেন ব্যবহার করতে পারি।

আশা করছি,এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি এই বিষয়ে অল্প কিছু হলেও জানতে সক্ষম হয়েছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি-এটি কোথায় ব্যবহৃত হয় নিয়ে লেখা আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও শেয়ার করতে ভুলবেন না। স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url