ডেঙ্গু জ্বর এর লক্ষণ বা উপসর্গগুলো কী - প্রতিরোধে কি করণীয়

ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে এক ধরনের ভাইরাস জনিত রোগ যা গ্রীষ্মকালীন সময় বেশি দেখা দেয়। এক ধরনের এডিস মশার কামড়ের কারণে এই ভাইরাস সংক্রমনের ঠিক ৩ থেকে ১৪ দিনের মাঝে এই জ্বরের উপসর্গগুলো বা লক্ষণ সমূহ দেখা দেয়। প্রিয় পাঠক, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ এবং প্রতিরোধ জানতে হলে মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

ডেঙ্গু জ্বর এর লক্ষণ কি - প্রতিরোধে কি করণীয়
ভেঙ্গে জোয়ার আছে একটি ভাইরাস জনিত এবং মশা বাহিত ভাইরাল সংক্রমণ। স্ত্রী মশার কামড়ের ফলে এটি সাধারণত হয়ে থাকে। ডেঙ্গুজোর তখনই হয় যখন একটু মশা একটি সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয় এবং এরপর ভাইরাস বহন করার সময় একটি অসংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয়।

ভূমিকা

এই জ্বর ক্যারিবিয়ান এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। এর গুরুতর রুপ হচ্ছে ডেঙ্গু হেমোরিজিক ফিভার। প্রচন্ড পরিমাণে রক্তপাত এবং রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায় যা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

এটি হচ্ছে মশা-বাহিত একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এর প্রধান হচ্ছে লক্ষণ হচ্ছে উচ্চমাত্রার জ্বর। জ্বর সাধারণত ৯৯ থেকে ১০৪° ফারেনহাইট তাপমাত্রা পর্যন্ত উঠে থাকে।
  • প্রধান লক্ষণ জ্বর (৯৯ থেকে ১০৪° ফারেনহাইট তাপমাত্রা)
  • প্রচন্ড পরিমাণে মাথা ব্যথা
  • ঢোক গিলতে বা কোন কিছু গিলতে কষ্ট হয়
  • শরীরে ব্যথা হয়
  • প্রচন্ড পরিমাণে দুর্বলতা বা ক্লান্তি ভাব হয়
  • চোখের পেছনে ব্যথা অনুভব হয়
  • মাত্রাতিরিক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস হয়
  • অনেক ক্লান্তি ভাব হয়
এই রোগ জীবন ও মানবদেহের শরীরের রক্তনালী গুলোকে খারাপ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। যার ফলে রক্তনালীর ভেতরে ছিদ্র তৈরি করে। এজন্য মানবদেহের বিভিন্ন অংশ হতে রক্তপাত এবং শেষ পর্যন্ত প্রাণ সংকট ঘটতে পারে। ডেঙ্গু রোগীর শরীরে প্রাণঘাতির যেকোনো একটি উপসর্গ দেখায় গেলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। তা না হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

এই জ্বরে আক্রান্ত হলে যত যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে এবং তার পাশাপাশি খাবারের দিকেও মনোযোগী হওয়া উচিত। এই জ্বরে আক্রান্ত রোগীর দ্রুত ভালো হয়ে ওঠার জন্য চিকিৎসকরা করার কিছু খাবার খেতে বলেন। চলুন এক নজরে সেই খাবার গুলো কি কি দেখে নেই।
  • প্রথমত ফলের মধ্যে কমলা বা কমলার রস এই রোগের জন্য প্রয়োজনীয়। এতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই দুটি উপাদান গুলো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য ভালো কাজে আসে।
  • দ্বিতীয়ত ডালিম প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে, কেননা এতে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল। যদি আপনি নিয়মিত ডালিম খেতে পারে তবে প্লাটিলেটের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এই ফলটি খেলে ক্লান্তি ভাব ও অবসাদ অনুভূতি দূর হয়ে যাবে।
  • তৃতীয়ত এই রোগ হলে মানব দেহে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়। এজন্য যদি সম্ভব হয় ডাবের পানি খেতে হবে কেননা এতে রয়েছে ইলেকট্রোলাইটসের সকল উপাদান। এমতাবস্থায়ী ডাবের পান করার ফলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
  • শাক সবজির মধ্যে ব্রকলি খাওয়া যেতে পারে,কারন প্রকৃত রয়েছে ভিটামিন কে এর উপাদান । ভিটামিন কে রক্তের প্ল্যাটিলে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি এন্টি -অক্সিডেন্ট এবং খনিজ সমৃদ্ধ। কোন ব্যক্তি যদি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে বেশি বেশি করে এটি খেতে হবে।
  • তাছাড়াও পালং শাক খেতে হবে কেননা পালং শাকে আয়রন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এটি মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এ শাকটি খেলে অতি দ্রুত প্লাটিলের বৃদ্ধি পায়।

ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ

ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ নয় এটি নিয়ে অনেকের মাঝেই ভুল ধারণা রয়েছে। স্পর্শ করলে বা এই জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির জিনিসপত্র ব্যবহার করলে, এই রোগ হতে পারে এ  ধারণাটি পুরোটাই ভুল। ডেঙ্গু রোগীর সাথে সামাজিক মেলামেশায় কোন বাধ্যবাধকতা নেই। 
সুতরাং জেলা আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদাভাবে রাখার কোন প্রয়োজন হয় না। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, ডেঙ্গু রোগীকে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে । মশারির বাইরে ফুলহাতা জামা কাপড় ব্যবহার করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয়

এই রোগের কোন ভ্যাকসিন হয় না। কারণ, এটি হচ্ছে একটি ভাইরাসজনিত রোগ এবং এটি চার টাইপের। চারটি ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করে,এমন ভ্যাকসিন এই পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি।
  • বসত বাড়ির আশেপাশে যতটুকু সম্ভব পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করতে হবে।
  • বাড়ির ভেতরে থাকা বিভিন্ন ফুলের টব কিংবা প্লাস্টিকের বোতল পরিষ্কার করে ফেলতে হবে বা বাড়ির পাশে কোন ধরনের ময়লার স্তুপ বা নর্দমা  থাকলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটি পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
  • মশা নিবারণের জন্য সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার স্প্রে করতে হবে।
  • বাড়ির আশেপাশে বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলতে হবে কারণ এতে এ সময় এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে।
  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এডিস মশা দিনের বেলায় কামড়ায় তাই দিনের বেলা ঘুমানোর সময় যথাসম্ভব মশারি ব্যবহার করে ঘুমাতে হবে।
আপনার বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার রাখলে এবং কিছু বিষয় নিয়ে সচেতন থাকার চেষ্টা করলে ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে। অপরদিকে, প্রতিবেশীদের কেউ এই বিষয়ে সচেতন করতে হবে বা জানিয়ে দিতে হবে। তাহলে আপনার পাশাপাশি আপনার প্রতিবেশীরাও এই রোগবালাইয়ের  প্রকোপ থেকে বাঁচতে পারবে।

ডেঙ্গু হলে কী করবেন, কী কী করবেন না

এই জ্বরের প্রকোপ সাধারণত জুলাই মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত থাকে। এজন্য এ সময় কি কি করা উচিত বা কি কি কাজ থেকে বিরত থাকা উচিততা জানা অত্যন্ত জরুরী।
  • অবশ্যই পরিপূর্ণভাবে বিশ্রাম নিতে হবে।
  • প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে, যেমন লেবুর শরবত,ফলমূলের জুস এবং যথা সম্ভব একটু পরপর স্যালাইন পান করুন।
  • ডেঙ্গু হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। খুব স্বাভাবিক ওজনের ব্যক্তি দিনে সর্বোচ্চ ৭-৮টি প্যারাসিটামল খেতে পারবেন। তবে কোন ব্যক্তির যদি হার্ট বা কিডনিজনিত কোন সমস্যা থাকে তবে অবশ্যই প্যারাসিটামল সেবনের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সময় এমন কোন ওষুধ সেবন করা যাবে না যেগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন অ্যাসপিরিন, ক্লোফেনাক, আইবোপ্রোফেন ইত্যাদি।
  • এই রোগের জন্য প্ল্যাটলেট মূল বিষয় নয়। এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার তেমন প্রয়োজন নেই।
  • এই জ্বর কমে যাওয়ার পর সংকটকাল পার হয়ে গেলে আপনা আপনি প্ল্যাটলেট বেড়ে যায়।
  • এই জ্বরের শেষ পর্যায়ে এসে রক্তচাপ কমে যায় অথবা না ক মারি ও মালদাতে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটা হলে প্রয়োজনে নিরাপদে স্যালাইন দিতে হতে পারে এজন্য রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

এক বা একাধিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে অতি সহজেই এই জ্বরকে নিবারণ করা সম্ভব হয়।বর্তমানে এই রোগে আক্রান্ত হলে মানবদেহে পানির পরিমাণ কমে যায়। তাই যথাসম্ভব এই সময়েই প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। এমতাবস্থায় এই রোগের বেশ কিছু লক্ষণ নিবারণ হয়ে যায়। মানবদেহে পানির পরিমাণ বেড়ে গেলে দেহের উপস্থিত টক্সিক প্রক্রিয়ার মাত্রাও কমে যায়।

নিম পাতা হচ্ছে এমন এক কার্যকর প্রাকৃতিক পাতা যা এটিকে কমাতে এর ব্যবহার অন্যতম। যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে শক্তিশালী করে এবং ভাইরাসের প্রভাবকে অতি দ্রুত কমিয়ে ফেলতেও নিম পাতা সাহায্য করে।

মানবদেহে প্ল্যাটলেট বাঁড়ার সাথে সাথে ভিটামিন সি এর মাত্রা বৃদ্ধি করাতে পেপের পাতা অতি  সুক্ষভাবে কাজে আসে। এজন্য সম্ভব হলে প্রতিদিন পেঁপে পাতার রস রোগীকে সেবন করাতে হবে। তবেই কাজে আসবে।তুলসী পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ কমাতে ভালো কাজে দেয়। এজন্যই কিছু বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গুর রোগীদের তুলসী পাতা খাওয়ার পরামর্শ দেয়।

এই রোগের সময় ঘুম হচ্ছে অতি গুরুত্বপূর্ণ যা মেথি এর পুরোপুরি ভূমিকা পালন করে। তাছাড়াও মেথি মানব দেহের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে এবং শরীরের ব্যথা  দূর করে দেয়।পুদিনা পাতার তেল মশা দূরীকরণে সাহায্য করে। এছাড়াও চিবিয়ে খেলে শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

মানবদেহের প্ল্যাটলেটের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য বার্লিপাতা চিবিয়ে খেতে হয় যা শরীরের রক্ত উৎপাদনের মাত্রা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করে।মানবদেহের উপস্থিত ডেঙ্গুর ভাইরাস দমনে সাহায্য করে এমন ফল খেতে হবে যেমন গোল্ডেন সিল অন্যতম। এটি মাথাব্যথা, করে বমি বমি ভাব এবং জ্বর ইত্যাদি কমাইতে সহায়তা করে।

উপসংহার

এই জ্বর ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। প্রচন্ড ডেঙ্গু জ্বর আমাদের জন্য হুমকি স্বরূপ এজন্য হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। আমরা যদি সুস্থভাবে সুরক্ষিত থাকতে চায় তবে আমাদের কে মশা থেকে বাঁচতে হবে। এবং একটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি অনেক জটিলতা এজন্য এ সম্পর্কে আরো সতর্ক থাকা উচিত।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধে কি করণীয় নিয়ে লেখা আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও শেয়ার করুন। আশা করি পুরো লেখাটি পড়ে অনেক উপকৃত হয়েছেন। স্বাস্থ্য ও সেবা সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url