গাড়ির টায়ারে রাবারের কাঁটা লাগানো কেন থাকে - এর কাজ কি

নতুন গাড়ি কেনার পর অথবা পুরাতন টায়ার পরিবর্তন করে নতুন টায়ার নেওয়ার সময় একটি বিষয় হয়তো লক্ষ্য করেছেন। সেটা হচ্ছে, গাড়ির টায়ারে রাবারের কাঁটা লাগানো কেন থাকে। তবে বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন যে এটি এক ধরনের ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্ট। কিন্তু এই গাড়ির টায়ারে রাবারের কাঁটা লাগানো কেন থাকে তার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে। এই আর্টিকেলে এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে হলে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
গাড়ির টায়ারে রাবারের কাঁটা লাগানো থাকে কেন - এর কাজ কি
নতুন টায়ারের সাথে রাবারের কাটার মত কিছু অংশ থাকে জানলে অবাক হবেন যে, এটি উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোন ভুল ত্রুটি নয় বরং এটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে। সাধারণত গাড়ি চলাচলের সময় টায়ারের উপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। এই চাপের প্রভাব কমাতে রাবারের কাঁটাগুলি টায়ারে ব্যবহৃত হয়।

ভূমিকা

সাধারণত রাবারের কাঁটা গুলিকে ভেন্ট স্প্যুস বলে, এর মানে হচ্ছে কোন বস্তুকে বাইরের দিকে রাখা। রাস্তায় যানবাহনের টায়ারের কার্যক্ষমতাকে আরো উন্নতি করার জন্য এটি তৈরি করা হয়, যা গাড়ি চলাচলের সময় গাড়ির ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। টায়ারের উপর এই ধরনের চাপের প্রভাব কমাতে রাবারের কাটাগুলি টায়ারে বসানো হয়ে থাকে।

গাড়ির টায়ারে রাবারের কাঁটা লাগানো কেন থাকে - এর কাজ কি

সাধারণত টায়ার যখন কারখানায় তৈরি করা হয়, ঠিক তখন রাবারগুলি গলে যেয়ে কিছু বাতাসের সাথে বুদবুদ সৃষ্টি করে। এমতবস্থায়, প্রবাহিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায় এবং সেটাকে দুর্বল করে তুলতে পারে, এজন্যই টায়ারের রাবারের কাটাগুলি বসানো হয়।

তাছাড়াও টায়ারের মধ্যে রাবারের কাটা বসানোর একটি বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। যখন যানবাহন রাস্তায় চলাফেরা করে তখন ঘর্ষণ শক্তির কারণে টায়ার খুব গরম হয়, যার ফলে রাবারের কাটা বাতাসের সাথে টায়ারের মধ্যে এক ধরনের যোগাযোগ এর জায়গা ছড়িয়ে পড়ে এবং ঠান্ডা থাকে।

আরো পড়ুনঃ ফাঙ্গাস রোগ কি - ফাঙ্গাস রোগের প্রতিকার

অনুরূপভাবে, গাড়ির পাশাপাশি বাইকের টায়ারেও একই ঘটনা ঘটে থাকে। টায়ার কিওর করার সময় কিছু জিনিসের প্রয়োজন পড়ে। তার মধ্যে টায়ার মোল্ড হচ্ছে অন্যতম। টায়ার মোল্ড এর কাজ হচ্ছে এটি দুইবার ততদি ক অংশে বিভক্ত করা যায় এবং গ্রীন টায়ারকে এর মধ্যে ঢুকে সেই অংশগুলোকে জোড়া দেওয়ার মাধ্যমে ছাঁচটা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়।

অপরটি হচ্ছে গ্রীন টায়ার।কারখানায় এটা তৈরির সময় ব্যবহৃত অংশ গুলোকে যেমন স্টিল বেল্ট, রাবার প্লাই, বিড ইত্যাদি কে একসাথে করে টায়ারের একটি পরিপূর্ণরূপ দেয়া হয়। বাতাস থেকে বের করে না দিলে এর মধ্যে কিছু ছিদ্র বা খুত তৈরি হয়। এজন্য বাতাসকে বের করার জন্য ছাঁচের মধ্যে কিছু কিছু সূক্ষ্ম ফোটা রাখা হয়। এগুলোকে সাধারণত স্প্রেউ হোল বা ভেন্ট স্প্রেুস বলে। এজন্য গাড়ির টায়ারের রাবারের কাঁটা লাগানো থাকে।

টায়ারের রং কালো হয় কেন

আমরা লক্ষ্য করে থাকি সাইকেল বা গাড়ির টায়ার সব সময় কালো রংয়ের হয়ে থাকে। এই বিষয়ে কি কখনো ভেবে দেখেছেন? গাড়ির টায়ারে রাবারের কাটা লাগানো থাকে সেই রাবার সাদা রঙের হয় কিন্তু তার যখন কারখানা থেকে তৈরি হয়ে আসে কালো রং হয়ে আসে। আজ থেকে প্রায় ১২৬ বছর আগে গাড়ির টায়ারে সাদা রং ব্যবহার করা হতো। তাহলে এখন কেন কালো রং ব্যবহার করা হয় জানলে হয়তো অবাক হবেন।

আরো পড়ুনঃ নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকবেন যেভাবে

গাড়ির টায়ারে রাবারের সঙ্গে কার্বন ব্ল্যাক মেশানো হয় এর আয়ু এবং টেকসই বাড়াতে। যাতে দীর্ঘদিন যাবত ধরে গাড়ি বা সাইকেল চালালে টায়ার ক্ষয় হয়ে না যায়। বাহন চলাচলের সময় রাস্তার সঙ্গে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয়ে সেটি গরম হয়ে যায় যার ফলে টায়ারের গ্রিপ ক্ষয় হওয়ার সম্ভব না থাকে।

এজন্য, কার্বন ব্ল্যাক মেশানো হয় এবং এটি টায়ারের তাপমাত্রা কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়াও সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি গায়ের টায়ারের রাবারকে অতি সহজেই শক্ত করে, যার ফলে টায়ারের আয়ু কমে যায়। কিন্তু কার্বন ব্ল্যাক এই বেগুনি রশ্মি হাত থেকে রেহাই দেয়। এইজন্যই সকল প্রকার যানবাহনের টায়ারের রং কালো হয়।

চাল, সয়াবিন ও পাইন দিয়ে তৈরি গাড়ির টায়ার

একটি টায়ার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যার নাম হচ্ছে গুডইয়ার। এই গুডইয়ার কোম্পানি চাল, সয়াবিন ও পাইন দিয়ে তৈরি করেছে যানবাহনের টায়ার। চাল, সয়াবিন ও পাইন দিয়ে তৈরি গাড়ির টায়ারটি ৯০% পরিবেশ বান্ধব এবং এই চারটি রাস্তায় ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হয়েছে। জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস নামক স্থানে অনুষ্ঠিত বিশ্বের অন্যতম আলোচিত প্রযুক্তি বিষয়ক কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শোতে টায়ারটি পরিদর্শিত হয়। যার অন্যতম কারণ হচ্ছে টায়ারটিতে তৈরিকৃত যৌগগুলোর পরিবর্তে চাল, সয়াবিন ও পাইনের মত পরিবেশবান্ধব উপাদান।

টায়ার প্রেসার কম অবস্থায় গাড়ি চালালে কি হতে পারে

টায়ার প্রেসার কম অবস্থায় গাড়ি চালালে কি হতে পারে তা জানাটা জরুরি। টায়ার প্রেসার কম হলে রাস্তার সাথে টায়ারের ঘর্ষণ বেড়ে যায়। ফলে, টায়ার অতি দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায়। এই অবস্থায় ৬০ এমপিএইচ অথবা এর বেশি গতিতে গাড়ি চালানোর ফলে টায়ার ফেইলোর হয়ে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাই।

এতে করে প্রত্যেকের জীবনকে বিপন্ন করে দিতে পারে। কম টায়ার প্রেসারে গাড়ি চললে টায়ারের আয়ুষ্কালও ব্যাপকভাবে কমে যায়।একটি টায়ারের ট্রাকশন ক্ষমতা তখনই কমে যায় যখন টায়ারের প্রেসার কম কম অবস্থায় থাকে।

আর ট্রাকশন ক্ষমতা কম মানে ইঞ্জিনের দক্ষতা অনুযায়ী যতটুকু অয়েল প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি অয়েল ব্যবহার করতে হয়। যার ফলে মাইলেজ লিটারে কমে যায় এবং ফুয়েল খরচটাও বেড়ে যায়। টায়ার প্রেসার কম অবস্থায় গাড়ি চালালে ইমারজেন্সি টার্নিং এবং ব্রেকিং এর সময় চাকায় যতোটুকু ট্রাকশন দরকার ওইটুকু ট্রাকশন পাওয়া না যাওয়ায় গাড়ি ইমার্জেন্সি কন্ট্রোল অকেজো হয়ে পড়ে এবং দুর্ঘটনা সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেড়ে যায়।

গাড়ির টায়ার প্রেসার কত রাখা ‍উচিত

গাড়ি টায়ারের ওপর নির্ভর করে গাড়ি এগিয়ে চলে। গাড়ির টায়ার প্রেসার কত রাখা উচিত আমাদেরকে জানতে হবে। এজন্য গাড়ির টায়ার প্রেসার কে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সবসময় চেষ্টা করবেন গাড়ির টায়ার প্রেসার সঠিক মাপে রাখার।

এক্ষেত্রে পেছনে এবং সামনে টায়ার প্রেসার কত পিএসআই রাখতে হবে সেটি বাইকের পেছনের চাকার আশেপাশেই লেখা আছে। একটু কষ্ট করে খোঁজার চেষ্টা করলেই খুঁজে পাবেন। প্রাইভেট কারের সামনে চাকার নির্দিষ্ট গাড়ির টায়ার প্রেসার ৩২ পি এস আই এবং পেছনের চাকার তার পেশার হচ্ছে ৩৫ পি এস আই।

দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়ির টায়ারের ৫টি কার্যকরী টিপস

  • টায়ারের স্ফীতি পরীক্ষাঃ গাড়ির টায়ারের স্ফীতি সঠিকভাবে বজায় থাকলে গাড়ির কার্যক্ষমতার উন্নতি হয়। প্রতিমাসে অন্তত একবার হলেও টায়ারের স্ফীতি পরীক্ষা করুন। তবে এটি যেন ঠান্ডা অবস্থায় পরিমাপ করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। ইনফ্লেটর কিটের মাধ্যমে টায়ারের স্ফীতি মাপা হয়।
  • নিয়মিত টায়ারের ক্ষত পরীক্ষা করুনঃ বর্তমানে অতিরিক্ত রাস্তায় ধুলাবালি বা পাথরের উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। যার ফলে অনেক সময় টায়ারের গায়ে ক্ষত হয়ে টায়ারের ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ সময় ব্রেক ফেইল বা টায়ার পাংচার হতে পারে যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।
  • সঠিক ভারবহনকারী গাড়ির টায়ার ব্যবহার করুনঃ গাড়ির ভার বহন ক্ষমতা অনুযায়ী গাড়িতে টায়ার ব্যবহারও ভিন্ন ধরনের হতে পারে। আদর্শ ভাড়া বহনের গাড়িতে কম বেশি ভার বহনকারী টায়ার ব্যবহার করবেন না। আবার বেশি ভার বহনের গাড়িতে কম ভাবে টায়ার বহন করবেন না। তা নাহলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যাবে।
  • সঠিক থ্রেড ডেপথের টায়ার ব্যবহার করুনঃ গাড়ির টায়ারের সঠিক কার্যক্ষমতা এবং দুর্ঘটনা এড়াতে টায়ারের থ্রেড ডেপথ ন্যূনতম ১.৬৬ মি/মি হতে হবে। যদি গাড়ির টায়ারের থ্রেড ডেপথ এর চেয়ে কম হয় তাহলে রাস্তায় বাক করতে গিয়ে পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য সঠিক থ্রেড ডেপথের টায়ার ব্যবহার করতে হবে।
  • পুরাতন  টায়ার ব্যবহার করবেন নাঃ ভালো ও নিরাপত্তা ভাবে গাড়ি চালাইতে হলে গাড়ির চাকায় পুরাতন টায়ার ব্যবহার করা যাবে না। কারণ পুরাতন টায়ার সবসময় তার গুনাগুন ধরে রাখতে পারেনা এজন্য গাড়ির সুরক্ষার ক্ষেত্রে সব সময় চেষ্টা করতে হবে নতুন টায়ার ব্যবহার করার এবং পুরাতন টায়ার ব্যবহার পরিহার করা। নতুন টায়ার কেনার সময় অবশ্যই এর উৎপাদনের তারিখ দেখে নিবেন।
  • আশা করি, দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়ির টায়ারের এই পাঁচটি কাজ করি টিপস আপনার অনেক কাজে দিবে।

উপসংহার

আশা করছি,এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি এই বিষয়ে অল্প কিছু হলেও জানতে সক্ষম হয়েছেন। গাড়ির টায়ারে রাবারের কাঁটা লাগানো কেন থাকে - এর কাজ কি নিয়ে লেখা আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও শেয়ার করতে ভুলবেন না। স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url