ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, সকলকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগতম। প্রায় সকলেরই ড্রাগন ফল
খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম জানার আগ্রহ রয়েছে।
তাই আজকের আর্টিকেলে ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - ড্রাগন ফল
খাওয়ার নিয়ম এবং ড্রাগন ফলের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জেনে নিব।
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকেন, তাহলে ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা ও
অপকারিতা - ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।
তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কনটেন্ট সূচিপত্রঃ
ভূমিকা
ড্রাগন ফল বাজারে আগে খুব একটা পাওয়া যেত না। কিন্তু, বর্তমান বাজারে প্রচুর
পরিমাণে পাওয়া যায়। ড্রাগন ফল বিদেশি ফল হলেও এর পুষ্টিগণের জন্য বর্তমানে
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। এখন প্রায়
অনেকেই এই ফলটি বাজার থেকে কিনে বাড়ি নিয়ে যান।
কিন্তু, ড্রাগন ফল খাওয়ার পূর্বে ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা, এই
ফল খাওয়ার নিয়ম এবং আরো অন্যান্য বিষয় জানাটা গুরুত্ব অপরিসীম। এ সকল বিষয়ে
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি, সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে
পড়বেন।
ড্রাগন ফল কি
ড্রাগন ফল হচ্ছে ক্যাকটাস গোত্রীয় গাছের সুমিষ্ট স্বাদের একটি ফল। একটি
গ্রীষ্মকালীন সময়ে প্রতিবছর আমাদের বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ড্রাগন ফল
আরেকটি নামের পরিচিত সে হচ্ছে পিতায়য়া এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে,
Hylicereus Undatus । বিদেশি ফল গুলোর মধ্যে এই ড্রাগন ফলটি আমাদের দেশে বেশি
পরিমাণে ফলে থাকে।
ড্রাগন ফল ক্যান্সার প্রতিরোধে বা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে এবং রক্তের কোলেস্টেরল
কমাতে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন
যা চোখ থেকে শুরু করে হৃদপিণ্ড, চুল, ত্বককে ভালো রাখার পাশাপাশি হজম
প্রক্রিয়াকে আরো উন্নত করে। ড্রাগন ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি ভূমিকা
পালন করে।
কেন ড্রাগন ফল খাবেন
ড্রাগন ফলে অনেক ভিটামিন সি থাকার কারণে রক্তের শ্বেতকণিকা ভালো রাখতে সহায়তা
করে। যার ফলে মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ড্রাগন ফলে
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়াই এই ফল নিয়মিত খেলে স্ট্রোকের যুক্তি কমে যায়।
এছাড়াও এতে বিটা-ক্যারোটিন এবং অন্যান্য অক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের হার্টেকে ভালো
রাখতে সাহায্য করে। ড্রাগনের বিদ্যমান লাইকোপেন ক্যান্সার রোধ করে এবং পেটের
প্রদাহ ও করুন ক্যান্সারে ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
এজন্য, বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর উপকারী হিসেবে এবং বিভিন্ন রোগ নিরাময় বা প্রতিরোধ
করতে ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন সমৃদ্ধ হওয়ার ফলে হাট
থেকে শুরু করে চুল ত্বক এবং চোখ ভালো রাখার পাশাপাশি হজম প্রক্রিয়াকে আরো বেশি
উন্নত করায় এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। কেননা, ড্রাগন ফল মানব দেহের জন্য একটি
কার্যকরী খাদ্য উপাদান।
২০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে কি পরিমাণ পুষ্টির উপাদান থাকে
কত গ্রাম ড্রাগন ফলে কি কি পুষ্টির উপাদান বা কি পরিমাণ পুষ্টির উপাদান থাকে সেটি
জেনে নেওয়া জরুরী। তাহলে চলুন জেনে নেই, ২০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে কি পরিমান পুষ্টির
উপাদান থাকে-
- প্রোটিন (০.৩০-০.১০ গ্রাম)
- ভিটামিন বি ৩ (০.৪-০.৮ মিলিগ্রাম)
- আয়রন (০.৬-০.১৪ মিলিগ্রাম)
- পানি (১৬০ গ্রাম)
- খাদ্য শক্তি (৭০-১০০ কিলোক্যালরি)
- ফসফরাস (৩২-৭০ গ্রাম)
- শর্করা (১৮-২০ গ্রাম)
- ক্যালসিয়াম (১২-২০ গ্রাম)
- থায়ামিন (স্বল্প পরিমাণে)
- ভিটামিন এ (স্বল্প পরিমাণে)
- ক্যারোটিন (স্বল্প পরিমাণে)
ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
বর্তমানে ড্রাগন ফলের চাহিদা আমাদের বাংলাদেশ বেড়েই চলেছে। যার ফলে দেশে এর
উৎপাদনও দিন দিন বাড়ছে। আমরা প্রায় সকলের ড্রাগন ফল খেয়ে থাকি কিন্তু এর
উপকারিতা সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষই জানতে চাই। তাহলে চলুন ড্রাগন ফল খাওয়ার
উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক-
হৃদপিণ্ড বা হার্টকে সুস্থ রাখতে: ড্রাগন ফল আমাদের মানব দেহের
হৃদপিণ্ড বা হার্টের জন্য অনেক উপকারী। কেননা এর কালো বীজগুলোতে রয়েছে
ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড। এসব ফ্যাটি অ্যাসিড হৃৎপিণ্ড বা হার্টের
জন্য খুবই উপকারী এবং Cardiovascular disease এর ঝুঁকি কমাতে সহায়তা
করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে: ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বিপুল পরিমাণে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
ক্যান্সারের উপাদানকারী কোষগুলিকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে। ড্রাগন ফলে
এন্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ ৯০ শতাংশ।
দৃষ্টিশক্তি উন্নতকরণে: সাধারণত, বেগুনি ড্রাগন ফল আমাদের চোখের
দৃষ্টি শক্তি আরো উন্নত করতে সাহায্য করে। কেননা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
বিটা-ক্যারোটিন। এজন্য এই ফল চোখের বিভিন্ন সমস্যা থেকে রেহাই দেয় যেমন
ম্যাকুলার ডিজাইনারেশন এবং ছানি পড়ে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
কিডনির সুস্থতায়: বেগুনি ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে
পটাশিয়াম রয়েছে। যা মানবদেহের কিডনিকে সুস্থ রাখতে সহায়তা
করে। তাছাড়াও কিডনিতে পাথর হতে একটি বাধা দেয়। এজন্য, প্রতিনিয়ত কিডনি কে
সুস্থ রাখতে বেগুনি ড্রাগন ফল খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: ড্রাগন ফল ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমায়। এই
ফলটি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়াতে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
সুতরাং এই ফল নিয়মিত খেলে, রক্তে শর্করার ভারসাম্যতা বজায় রাখতে সাহায্য
করবে।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে: ড্রাগন ফলে রয়েছে ফাইবার যার সাহায্যে আপনার
হজম শক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি পাকস্থলীর প্রক্রিয়া পরিষ্কার করতেও সাহায্য
করে। এছাড়াও, এটি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও মুক্তি
দেয়।
ওজন কমাতে: ড্রাগন ফলে ফ্যাটের পরিমাণ একদমই নেই। এজন্য এই ফল ওজন
কমাতে অনেক সাহায্য করে। ড্রাগন ফলকে ওজন কমাতে একটি আদর্শ খাবার হিসেবে ধরা যায়।
চুল পড়া রোধে: বর্তমানে প্রায় সকলেরই চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে।
এই চুল পড়া রোধ করতে চমৎকারভাবে কাজ করে ড্রাগন ফল। এজন্য আপনি যদি ড্রাগন ফলের
রস চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে আধা ঘন্টা রাখার পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নেন
তাহলে আপনার চুল পেকে যাওয়া রোধ করার পাশাপাশি চুলকে সুস্থ রাখতে
সহায়তা করবে। ড্রাগন ফলের রসের সাহায্যে আপনার চুলগুলো অক্সিজেন পাবে এবং চুলকে
স্বাস্থ্যকর ও মসৃণ করে তুলবে।
মুখের ব্রণ দূর করতে: মুখের ব্রণ দূর করতে ড্রাগন ফল অনেক কার্যকরী
উপাদান। কেননা, ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা Topical মলম
হিসেবে কাজ করে। আপনি যদি Topical মলম তৈরি করতে চান তাহলে প্রথমে ড্রাগন ফল
ছোট ছোট টুকরা করে ব্যালেন্ডারে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপরে মুখমণ্ডলে
যে সকল স্থানে ব্রণ রয়েছে সে সকল স্থানে সেটি লাগাতে হয়। আপনি যদি এইভাবে
প্রতিদিন সকালে রাতে ব্যবহার করেন তাহলে ভালো ফলাফল পাবেন।
ড্রাগন ফল খাওয়ার অপকারিতা
এতক্ষণ আমরা ড্রাগন ফলের উপকারিতা গুলো জেনে নিলাম। কিন্তু প্রতিটা খাদ্যেই
উপকারিতা থাকার পাশাপাশি সেই খাদ্যের অপকারিতা রয়েছে। তাহলে চলুন ড্রাগন ফল
খাওয়ার অপকারিতা কি সেটি জেনে নেই-
অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে প্রধানত অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের ড্রাগন ফল স্বল্প পরিমাণে খাওয়া
উচিত। এলার্জির সমস্যা থাকাকালীন আপনি যদি অতিমাত্রা ড্রাগন ফল খান তাহলে আপনার
এলার্জির সমস্যা আরো বেড়ে যাবে। যা আপনার জন্য ক্ষতিকারক।
খুব বেশি পরিমাণে ড্রাগন ফল খেলে ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। ড্রাগন ফল
আমাদের পাঁচক সিস্টেমকে ভালো রাখে। এছাড়াও অন্ত্রের সমস্যা এবং পেটে ব্যথা থেকে
মুক্তি দেয়। তবে অতিরিক্ত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
আপনি যদি ড্রাগন ফল খাওয়ার পূর্বে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খেয়ে অতিরিক্ত
পরিমাণে এই ফল খেয়ে ফেলেন তাহলে ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়া যাবে কিনা
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়া যাবে কিনা? এই প্রশ্নটি প্রায় অনেকেই করে
থাকেন। প্রশ্নটির উত্তর হচ্ছে ড্রাগন ফল খাওয়া যাবে। কেননা ড্রাগন ফলে
রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ যা একজন গর্ভবতী মায়েদের জন্য কার্যকরী
খাবার। তবে সচেতন থাকতে হবে যে, ড্রাগন ফল অতিমাত্রায় খাওয়া যাবেনা এবং ড্রাগন
ফল খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই এর খাওয়ার নিয়ম গুলো জেনে নিয়ে খাবেন।
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
ড্রাগন ফল অন্যান্য ফলের চেয়ে অধিকতর সুন্দর দেখায়। সঠিক নিয়মে ড্রাগন ফল
খাওয়ার ফলে ড্রাগন ফলের উপকারিতা সহজেই পাওয়া যায়। তাহলে চলুন ড্রাগন ফল
খাওয়ার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক-
- প্রথমে অন্যান্য ফলের মত ড্রাগন ফলটির মাথার অংশ এবং পেছনের অংশ কেটে নিতে হবে।
-
এরপর ফলটির মাঝখান বরাবর কেটে ফেলতে হবে।
-
ফলের ওপরের সলাটি সরিয়ে ফেলতে হবে।
-
এরপর আপনার পছন্দমত টুকরো টুকরো করে নিন।
- এরপরে আপনি অন্যান্য ফলের মত খেতে পারে অথবা বিভিন্ন রেসিপি অবলম্বন করে অথবা ব্লেন্ডারে জুস করে খেতে পারেন।
তবে সচেতন থাকতে হবে যে, একটি খাওয়ার পূর্বে লবণ মিশিয়ে খাওয়া যাবেনা। আশা
করি, ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে
জানতে পেরেছেন। আপনি যদি নিয়ম মেনে ড্রাগন ফল নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে আপনি
মানবদেহে জন্য এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এই ফলটি আপনার শরীরের জন্য অনেক কার্যকরী
উপাদান। যা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রায়ই খাওয়া উচিত।
লেখকের শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায়, সঠিক নিয়মে ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে ড্রাগন ফলের উপকারিতা
সহজেই পাওয়া যায়। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি এই বিষয়ে অল্প কিছু
হলেও ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম এই
সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন। যদি এ বিষয়ে আপনাদের মাঝে কোন প্রশ্ন বা মতামত
থাকে, তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।
ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম নিয়ে লেখা
আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও আপনার পরিচিতদের শেয়ার করতে
ভুলবেন না। স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের
ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
Good writer❤️
Thank you & stay with us