গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে কি - ইসবগুলের ভুসির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, সকলকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
নিয়ে আলোচনা করব সেটি হচ্ছে গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে কি -
ইসবগুলের ভুসির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। আশা করি, গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া
যাবে কি - ইসবগুলের ভুসির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এই বিষয়টি জেনে আপনি উপকৃত হবেন।
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকেন তাহলে গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি
খাওয়া যাবে কি - ইসবগুলের ভুসির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এই সম্পর্কে বিস্তারিত
জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে
নেওয়া যাক।
কনটেন্ট সূচিপত্রঃ
ভূমিকা
ইসবগুলের ভুসি হচ্ছে এক ধরনের দ্রবণীয় ফাইবার যা আমরা মূলত সাইলিয়াম বীজের
খোসা থেকে পেয়ে থাকি। একটি রেচক বা ল্যাক্সেটিভ (laxative) হিসেবে আমাদের কাছে
পরিচিত। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসবগুলের ভুষি মানবদেহের বিভিন্ন
অঙ্গ, অগ্ন্যাশয় এবং হার্ট বা হৃদপিণ্ড সুস্থ সবল রাখতে এটি বিশেষভাবে ভূমিকা
পালন করে।
প্রকৃতপক্ষে আমাদের মানবদেহে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে বেশ ভালোভাবে এটি
বিশেষভাবে কাজ করে। এজন্য, গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে কি -
ইসবগুলের ভুসির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া অতীব জরুরী।
ইসুবগুলের ভুসির উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল
ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে আদিবাসী স্থানে ইসুবগুলের ভুসির উৎপত্তি হয়েছে। কিন্তু এক পর্যায়ে আস্তে আস্তে এটি পুরো বিশ্বে
ছড়িয়ে গেছে। ইসবগুলের ভুসির উত্তর আফ্রিকা চীন রাশিয়া ভারত এবং বর্তমানে বাংলাদেশেও চাষাবাদ
করা হয়। ভারত উপমহাদেশে ষোড়শ শতাব্দীতে এসব করে এবং বিশ্বাস করা হয়
যে মুঘল শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশ এই ভুষির চাষাবাদ শুরু হয়েছিল।
ভারত উপমহাদেশে ‘প্ল্যান্টাগো’গণের জেনাসের প্রায়ই ২০০ প্রজাতির মধ্যে
১০টি প্রজাতি পাওয়া গিয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্যে
বৃদ্ধি পাওয়া সাইলিয়াম বিভিন্ন ধরনের নামে বিক্রি হত। তবে সেই স্থানে
মেটামুসিল নামে পরিচিত ছিল।
ইসুবগুলের ভুসির পরিচিতি কি
ইসবগুলের ভুসির পরিচিতি
হচ্ছে ভারতীয় সাদা বীজ প্লান্টাগো ওভাটা এবং স্প্যানিশ প্লান্টেগস সাইলিয়াম
এ দুটি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হয়। সাধারণত এই কাজ দেড় থেকে দুই ফুট
লম্বা হয়ে থাকে। ইসুবগুলের ভুসির দুটি কোষ রয়েছে যা ৭ থেকে ৮ মিলিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। এর ওপরের
খোসা গুলো পিচ্ছিল থাকে, যেটা ইসবগুলের ভুসি হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
ইসুবগুলের ভুসি একটি উপকারী খাদ্য হিসেবে পরিচিত। বীজের খোসা গুলো ভুসি
হিসেবে খাওয়া হয় আর এই ভুসি আমরা সাধারণত শরবত বানিয়ে খেয়ে থাকি। এই
উপকারে বীজ অর্থাৎ ইসবগুলের ভুসি আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যসহ বিভিন্ন রূপ
থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে কি
আপনাদের অনেকের মাঝে প্রশ্ন থাকতে পারে যে গর্ভাবস্থায় ইসুবগুলের ভুসি
খাওয়া যাবে কি? উত্তর জানার আগে আমরা জেনে নিব গর্ভাবস্থায়
ইসুবগুলের ভুসি নিরাপদ
কিনা। গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ। এটি
প্রাকৃতিকভাবে রেচক হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ খাবারের হজম শক্তি হিসেবে কাজে
আসে।
গর্ভাবস্থায় প্রায় সকল নারী কোষ্ঠকাঠিন্যতায় ভোগেন। এই কোষ্ঠকাঠিন্য
প্রতিরোধে বা সবচেয়ে কার্যকরী উপাদান হিসেবে ইসুবগুলের ভুষি খেতে পারেন।
ইসবগুলের ভুসি নিয়মিত
খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য একেবারে উধাও হয়ে যাবে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রতিদিন
ঘুমানোর পূর্বে ২ চা চামচ ইসবগুলের ভুসি এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ভিজিয়ে রেখে দুই থেকে তিন মিনিট
পরে সেবন করে নিতে হবে।
এইভাবে নিয়মিত ৭ দিন ইসুবগুলের ভুসি সেবন করলে খুব সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য
উধাও হয়ে গেছে। এছাড়াও অনেক গর্ভবতী রয়েছেন যাদের রক্তের কোলেস্টেরল
বেশি থাকে। তাদের ক্ষেত্রেও ইসবগুলের ভুষি অনেক কার্যকর একটি খাদ্য উপাদান।
কেননা ইসবগুলের ভুসি শুধু কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে না এর পাশাপাশি
গর্ভাবস্থার নারীদের রক্তের কোলেস্টেরল বেশি থাকলে সেটি কমাতে সাহায্য করে।
ইসবগুলের ভুসির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ইসুবগুলের ভুসি আমাদের
অনেক উপকারে আসে। কিন্তু এর বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন
অতিরিক্ত সময় ধরে এই ভুসি খাওয়া যাবেনা। এতে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা
থাকে। আপনি যদি বিরতি দিয়ে এটি খেয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনার
জন্য কার্যকর।
ইসবগুলের ভুসির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে ডায়রিয়া, গ্যাস, ফোলা ভাব এবং
কোষ্ঠকাঠিন্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। এমনকি এলার্জির প্রতিক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত
করা হয়েছে। আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য রোধের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে,
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং সিরিয়ার ফল শাক-সবজি ইত্যাদিসহ উচ্চ
ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে হবে।
যেসব ব্যক্তির অন্ত্রে বাধা বা খিঁচুনি, গিলতে অসুবিধা বাধা রয়েছে এসব
ব্যাক্তিদের ইসবগুলের ভুষি খাওয়া উচিত নয়। এছাড়াও যারা কিডনি রোগে
বিভিন্ন ভাবে আক্রান্ত রয়েছে এবং যারা নির্দিষ্ট ভাবে ওষুধ সেবন করছেন
তারা সায়লিয়াম সাপ্লিমেন্ট না নেওয়াটাই উত্তম। শিশুদেরকে ডাক্তারের
পরামর্শবিহীন বা স্বাস্থ্যসেবা প্রধান কারী দ্বারা সুপারিশ না করে
শিশুদেরকে ইসবগুলের ভুষি খাওয়াবেন না।
আপনাদের মধ্যে যদি এমন স্বাস্থ্যের অবস্থা থাকে যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন
যেমন ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ। এমতাবস্থায় আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ
করুন। তাছাড়াও ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সময় কিছু ঔষধের সমস্যা সৃষ্টি হতে
পারে। তাই আপনি যথায থ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে জেনে নিন যে আপনি কোন
ওষুধের সাথে ইসুবগুলের ভুষি খেতে পারবেন কিনা।
রাতে খাবারের আগে ইসবগুলের ভুসির খাওয়া যাবে কি
আপনাদের অনেকের মাঝেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে রাতে খাবারের আগে ইসুবগুলের
ভুষি খাওয়া যাবে কি? বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে ইসবগুলের ভুসি
খালি পেটে না খাওয়াই উত্তম। তারা এটিও বলেছেন এক গ্লাস পানি বা ফলের রসের
সাথে এক চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খাবার খাওয়ার পর এটি খেতে।
এছাড়াও যাদের শারীরিক সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী ইসবগুলের ভুসি খাবেন। ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই বেশি
পরিমাণে পানি পান করে নিতে হবে।
ইসবগুলের ভুষি খেলে কি মোটা হওয়া যায়
ইসবগুলের ভুসি খেলে মোটা হওয়া যায় না। এটি ওজন কমাতে সহায়ক। আমরা অনেকেই
ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ডায়েট মেনে চলি। নানা ধরনের শরীরচর্চা
চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রিয় খাবার গুলো বাতিলের লিস্টে রেখে ওজন কমানোর
চ্যানেল দিতে কারোই ভালো লাগে না।
বিভিন্ন ধরনের বাদামি চাল সবজির রস এসব খাবার খাদ্য তালিকায় যোগ করলে
তা আপনাকে আরো সুস্থ কর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করবে কিন্তু যদি স্বাদের
প্রসঙ্গে আসা হয়, তাহলে এগুলো অবশ্যই পিছিয়ে থাকবে। তাছাড়াও এর সকল কিছু
মেনে চললেও বর্তমানে ওজন কমানো মুখ্য বিষয় নয়।
এমন একটি পরিচিত খাদ্য রয়েছে যার সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই খুব একটা ধারণা
নেই। সেই খাদ্য উপাদানটি হচ্ছে ইসবগুলের ভুষি। এই ইসবগুলের ভুসি খেললে তো
কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়ে যায় এই বিষয়টি সকলেরই জানা আছে। কিন্তু, এই
ইসবগুলের ভুষি ওজন কমাতে যে কতটুকু সহায়ক সে বিষয়ে অনেকেই জানেন না।
ইসবগুলের ভুষি নামে পরিচিত এই খাদ্য উপাদানটি একটি দ্রবণীয় ফাইবার
যা Plantago ovatar গাছের বীজের ভুসি থেকে পাওয়া যায়। একটি সাধারণত
রেচক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে। এছাড়াও অন্ত্রের জন্য, হার্ট
এবং অগ্ন্যাশয় এর ক্ষেত্রে বেশ উপকারী।
অনেক ক্ষেত্রে ভুসি দানা এবং ক্যাপসুল আকারে পাওয়া যায়। যেটি পুরো
বিশ্বের মানুষ একটি খাদ্য তালিকা গত পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করে থাকে এবং
এটি যথাযথভাবে শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ইসবগুলের ভুসি কখন খেতে হয়
ইসুবগুলের ভুষি খাবারের পরে খাওয়াটাই উত্তম। তবে প্রাপ্তবয়স্ক করা তাদের
শরীরের কার্যকারিতার ওপর ডিপেন্ড করে দিনে ২ বার খেতে পারবেন। বিশেষজ্ঞরা
ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার বেশ কয়েকটি নিয়ম আছে বলে ধারণা করে। তার মধ্যে এক
গ্লাস পানি বা ফলের রসের সাথে এক চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খাবার খাওয়ার
পর এটি খেতে পরামর্শ দিয়েছেন।
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার পূর্বে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি
পান করবেন। এছাড়াও প্রয়োজনের বেশি গ্রহণ করা থেকে এড়িয়ে থাকতে হবে কারণ
এটি দ্বারা ভারি হওয়ার অনুভূত হতে পারে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে
আপনার যদি শারীরিক কোন সমস্যা থাকে তাহলে এসব গুলো ভুসি খাওয়ার পূর্বে
অবশ্যই ডাক্তারের বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি সেবন করবেন।
লেখকের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আমরা ইতিমধ্যে গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে কি এবং ইসবগুলের ভুসির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি, আপনারা জেনে উপকৃত হবেন। যদি এ বিষয়ে আপনাদের মাঝে কোন প্রশ্ন বা
মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে কি - ইসবগুলের ভুসির
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এই বিষয়ে নিয়ে লেখা আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে
থাকলে কমেন্ট ও শেয়ার করতে ভুলবেন না। বিভিন্ন তথ্যবহুল স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত
অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url