গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা - গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, সকলকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগতম। কিসমিস সারা বিশ্বের বিভিন্ন
অঞ্চলের উৎপাদিত হয়। কিসমিস রান্নার মাধ্যমে ও সরাসরি খাওয়া
যায়। গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
রয়েছে। তাই আজকে আমরা কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া,
গর্ভাবস্থায় কতদিন এবং কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত এই সম্পর্কে আলোচনা করব।
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকেন, তাহলে গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার
উপকারিতা - গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং কিসমিসের
অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না
বাড়িয়ে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
ভূমিকা
আমরা অনেকেই জানি কিসমিস হচ্ছে অনেক সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ভিটামিন জাতীয়
খাদ্য। গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার ফলে অনেক উপকার হয়। কেননা এতে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফাইবার, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। কিসমিস
গর্ভবতী মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করে, রক্তস্বল্পতা
প্রতিরোধ করে এবং প্রসবকে সহজতর করে।
কিসমিস আমাদের দেহের জন্য অনেক উপকারী একটি খাদ্য উপাদান। এটি প্রাকৃতিক মিষ্টি
হওয়ার কারণে অনেকে এটিকে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। অনেক গর্ভবতী
মহিলারা জানতে চাই গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় কতদিন
কিসমিস খাওয়া উচিত, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি। পুরো পোস্ট জুড়ে এর সকল
বিষয় বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
কিসমিসের পুষ্টির উপাদান
কিসমিসে পুষ্টির উপাদান অনেক বেশি থাকে। খনিজ পদার্থ একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য
বেশ কার্যকর খাদ্য। চিকিৎসকদের মতে, কোন গর্ভবতী মহিলা যদি নিয়মিত কিসমিস
খায় তাহলে মানব দেহে অনেক উপকারে আসবে। এবার চলুন জেনে নেই প্রতি ১০০ গ্রাম
কিসমিসে কি পরিমাণ পুষ্টির উপাদান থাকে-
- খাদ্যশক্তি (২৯৯ কিলোক্যালরি)
- প্রোটিন (৩.৭গ্রাম)
- ফ্যাট (০.৪৭৫ গ্রাম)
- শর্করা (৫৯.১৯ গ্রাম)
- ক্যালসিয়াম (৫০ মিলিগ্রাম)
- পটাশিয়াম (৭৪৯মিলিগ্রাম)
- সোডিয়াম (১১ মিলিগ্রাম)
- জিংক (০.২২ মিলিগ্রাম)
- ভিটামিন বি ৬ (০.১৭৪ মিলিগ্রাম)
- ভিটামিন সি (২.৩ মিলিগ্রাম)
- ভিটামিন ই (০.১২ মিলিগ্রাম)
- ভিটামিন কে (৩.৫ মিলিগ্রাম)
- সেচুরেটেড এবং মনোসেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড সামান্য পরিমাণে থাকে।
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া কি নিরাপদ?
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া কি নিরাপদ হবে? হ্যাঁ নিরাপদ হবে। কেননা মিস হচ্ছে
একটি প্রাকৃতিক এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকার খাদ্য
হিসেবে পরিচিত। গর্ভকালীন সময়ে সবচেয়ে উত্তম পুষ্টি এবং অন্যান্য সুবিধা
পাওয়ার জন্য কিসমিস খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না।
প্রকৃতপক্ষে, গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া নিরাপদ হলেও এটি নিয়মিত খাওয়া
অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিমাত্রায় কিসমিস খাওয়া যাবেনা।
অতিমাত্রায় কিসমিস খেলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বা কোষ্ঠকাঠিন্য
সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য গর্ভকালীন সময়ে নিয়ম অনুযায়ী স্বল্প পরিমাণে
পরিমিত কিসমিস খাওয়া উত্তম।
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভবতী এবং গর্ভস্থ শিশুর জন্য গর্ব অবস্থায় কিসমিস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য
অনেক উপকারী। দুজনের মধ্যেই একই পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়, এজন্য দুজনেরই উপকারিতাও
একই। তাহলে চলুন এবার জেনে নেই গর্ভাবস্থা কিসমিস খাওয়ার হলে কি কি উপকারিতা
পাওয়া যায়-
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি: গর্ভকালীন সময়ে হরমোনের পরিবর্তন
হওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাছাড়াও গর্ব অবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যর
অন্যান্য কারণ হচ্ছে কম ফাইবার, কম শারীরিক পরিষদ এবং তরল গ্রহণ। এই
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে হলে কিসমিস নিয়মিত খেতে পারেন কারণ এতে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা অনেকটাই নিরাময়
হবে।
অ্যানিমিয়া থেকে মুক্তি: গর্ভকালীন সময়ে মানবদেহে আয়রনের অভাবের
কারণে অ্যানিমিয়া সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণত, আয়রন
লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। যার ফলে, রক্তশূন্যতার সমস্যা
থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এজন্য নিয়ম অনুযায়ী কিসমিস এবং শুকনো আঙ্গুর খেতে
পারেন। কেননা, এতে রয়েছে আয়রন যা গর্ভকালীন সময়ে কিসমিসকে উপকারী খাদ্য
হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে: গর্ভস্থ শিশুর গর্ভে অনেক সময় সমস্যা হয়ে
থাকে। যেমন একটি সমস্যা হচ্ছে নিউরাল টিউব ডিফেক্ট। এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে
পর্যাপ্ত ফলিক এসিড খেতে হবে। এজন্য গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত কিসমিস খেতে পারে
কেননা এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক এসিড। তাছাড়াও ফলিক এসিযুক্ত খাবার একটি
সাধারণ মানুষের জন্যও উপকারী।
হাড় মজবুতকরনে: আমি জানি, সাধারণত ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেলে হাড়
মজবুত বা শক্ত হয়। ক্যালসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সহায়তা করে। কিসমিসের
রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। একটি ভ্রনের হার গঠনের ক্ষেত্রে সহায়তা
করে। এজন্য কর্মকালীন সময়ে উপকারী খাদ্য হিসেবে কিসমিস তালিকাভুক্ত
করা যেতে পারে।
শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে: গর্ভাবস্থায় শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে
কিসমিস শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত। গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার ফলে শরীরের
দুর্বলতা দূর হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া অনেক উপকারী। তবে গর্ভবতীরা যদি অতিমাত্রায় কিসমিস
খেয়ে ফেলে তাহলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এজন্য গর্ভাবস্থায় কতটুকু
কিসমিস খাওয়া উচিত সেটি জেনে নেওয়া জরুরী।
গর্ভাবস্থায় সর্বোচ্চ ৩০ গ্রাম কিসমিস খেতে পারেন। তবে প্রতিটি গর্ভবতী মহিলাদের
স্বাস্থ্যের অবস্থা আলাদা হয়ে থাকে এজন্য একজন গর্ভবতীকে কিসমিস খাওয়ার সঠিক
পরিমাণ জানতে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন পরামর্শ নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
সঠিক নিয়মে কিসমিস খেলে এর ভালো ফলাফল অবশ্যই সহজেই পাওয়া যায়। এজন্য
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার নিয়ম জেনে নেওয়া জরুরী। প্রকৃতপক্ষে গর্ভাবস্থায়
প্রতিদিন আধা কাপ বা ৩০ গ্রামের বেশি কিসমিস অথবা শুকনো ফল খাওয়া উচিত
নয়।
কেননা, এতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যা
সৃষ্টি হতে পারে। এ সকল সমস্যার সম্মুখীন যেন না হতে হয় সেজন্য অবশ্যই নিয়ম
মেনে কিসমিস খেতে হবে। তবে গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার শক্তি
থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
যাদের কিসমিস থেকে দূরে থাকা উচিত
গর্ভকালীন সময়ে কালো কিসমিস খাওয়াটা একজন মা এবং শিশুর জন্য কিছুটা ঝুঁকি
সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কিসমিসের মধ্যে ক্ষতিকারক
ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যাক খাদ্যের মধ্যে বিষক্রিয়া ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
এজন্য, গর্ভবতী মহিলাদের খুব বেশি অতিমাত্রায় কিসমিস খাওয়া একদমই উচিত নয়।
কেননা কিসমিসে চিনির পরিমাণ বেশি থাকার ফলে গর্ভকালীন সময় ডায়াবেটিস হওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় কালো কিসমিস খেলে হজম শক্তি হ্রাস পায়
যার ফলে ডায়রিয়া এবং গ্যাস হতে পারে। পরিশেষে বলা যায়, গর্ভাবস্থায় কিসমিস
খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে পরিমাণ মতো খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিসমিস খাওয়া একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক উপকারী হওয়ার পাশাপাশি অত্যাধিক
কিসমিস খাওয়ার ফলে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। কোন গর্ভবতী মহিলা যদি
বেশি পরিমাণে কিসমিস খায় তাহলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে
কর্মকালীন সময়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি গর্ভবতীর ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। গর্ভকালীন
সময়ে অর্জুন বৃদ্ধি হয়ে গেলে প্রসবের পরে আপনাকে ওজন কমানোর জন্য কঠিন পদক্ষেপ
নিতে হবে। যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য একটি ক্ষতিকর দিক।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আক্রান্ত মহিলারা কি কিসমিস খেতে পারবেন
কিসমিসের মধ্যে সাধারণত চিনির পরিমাণ বেশি থাকে যা গর্ভকালীন সময়ে রক্তে শর্করার
মাত্রা বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেটি অবশ্যই বাঞ্ছিত নয়। এজন্য
গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি রয়েছে এমন গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায়
কিসমিস খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। গর্ভকালীন
সময়ে আপনি যত নিরাপদ থাকবেন আপনার জন্য তত উপকারী হবে। আশা করি, গর্ভকালীন সময়ে
ডায়াবেটিস আক্রান্ত মহিলারা কিসমিস খেতে পারবেন কিনা বুঝতে পেরেছেন।
লেখকের শেষ কথা
সঠিক নিয়মে কিসমিস খেলে এর ভালো ফলাফল অবশ্যই সহজেই পাওয়া যায়। আশা করছি, এই
আর্টিকেলটি পড়ে আপনি এই বিষয়ে অল্প কিছু হলেও গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার
উপকারিতা - গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এই সম্পর্কে জানতে
সক্ষম হয়েছেন। যদি এ বিষয়ে আপনাদের মাঝে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তাহলে
অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা - গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে লেখা আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট
ও আপনার পরিচিতদের শেয়ার করতে ভুলবেন না। স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত
অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url