পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কি - পেয়ারা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, সকলকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগতম। দৈনন্দিন জীবনে প্রতিদিনের
খাদ্য তালিকায় পেয়ারা রাখলে আমাদের মানব দেহের অনেক উপকারে আসবে। আজকের
আর্টিকেলে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কি - পেয়ারা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি, পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কি -
পেয়ারা খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে আপনি উপকৃত হবেন।
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকেন, তাহলে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কি -
পেয়ারা খাওয়ার সঠিক নিয়ম, পেয়ারার পুষ্টিগুণ এবং পেয়ারার অন্যান্য বিষয়
সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন, আর কথা না বাড়িয়ে এই
সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
ভূমিকা
পেয়ারা আমাদের প্রায় সকলেরই একটি প্রিয় ফল। আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন
যারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা খেয়ে থাকি। এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ এর কোন
তুলনা হয় না। পেয়ারা প্রাই সব ঋতুতেই বাজারে অনেক কম দামে পাওয়া যায়।
তবে আমাদের মধ্যে অনেকেরই পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কি - পেয়ারা খাওয়ার সঠিক
নিয়ম সম্পর্কে জানা নেই। এজন্য আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে পেয়ারা খাওয়ার
উপকারিতা, পেয়ারার পুষ্টিগুণ, পেয়ারা খাওয়ার সঠিক নিয়ম, গর্ভাবস্থায় পেয়ারা
খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পেয়ারার অপকারিতা ইত্যাদি।
পেয়ারা কি
বর্তমানে পেয়ারা হচ্ছে বহুল প্রচলিত এবং অনেক সহজলভ্য একটি ফল। পুরো বিশ্বের
মধ্যে মধ্য আমেরিকায় অবস্থিত মেক্সিকোতে সর্বপ্রথম পেয়ারা পাওয়া যায় এবং ধীরে
ধীরে এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে পেয়ারার প্রচলিত হয়ে যায়। ভারতবর্ষে
সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পেয়ারা উৎপাদিত হয়। এরপর পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, চীন এবং
ইন্দোনেশিয়া উৎপন্ন হয়।
পেয়ারা বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে যেমন বিভিন্ন প্রজাতির পেয়ারাগুলোকে আমরা
কার এবং রং দিয়ে প্রকারভেদ করে থাকি। কিছু পেয়ারা রয়েছে যার রং উপরটা হলদে
সবুজ এবং ভেতরটা লাল অথবা গোলাপী রঙের হয়। আবার কিছু পেয়ারা রয়েছে যেগুলো আকারে
অনেক বড় হয় এবং কিছু পেয়ারা আকারে অনেক ছোট হয়। তবে সকল প্রজাতির
পেয়ারা খাওয়া উপকারিতা আমাদের মানবদের জন্য প্রায় সমান।
প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারার পুষ্টিগুণ
পেয়ারা একটি পুষ্টিকর ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। অন্যান্য
যে সকল সাইট্রাস ফল রয়েছে যেমন কমলালেবুর তুলনায় পেয়ারায় ভিটামিন সি রয়েছে
প্রায় ৫ গুণ বেশি। এছাড়াও এতে রয়েছে ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস,
বিটা-ক্যারোটিন, পটাশিয়াম এবং নিকোটিনিক এসিড। এবার চলুন জেনে নেই প্রতি ১০০
গ্রাম পেয়ারা তে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে -
- ভিটামিন সি (১৮০ গ্রাম)
- ভিটামিন এ (২৫০ আই ইউ)
- ক্যালোরি (৭ মিলিগ্রাম)
- থায়ামিন (০.০৭ গ্রাম)
- ক্যালসিয়াম (৩০ মিলিগ্রাম)
- ফসফরাস (২৯ মিলিগ্রাম)
- প্রোটিন (১ গ্রাম)
- কার্বোহাইড্রেট (১৭.১ গ্রাম)
পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কি
আমরা অনেকেই পেয়ারাকে একটি সাধারণ ফল ভেবে খেতে চাই না। তবে নিশ্চিতভাবে বলা
যায় যে অন্যান্য ফলের তুলনা পেয়ারায় উপকারিতা অনেক বেশি। যদি প্যারা খাওয়ার
উপকারিতা সম্পর্কে জেনে না থাকেন তাহলে চলুন এরা খাওয়ার উপকারিতা কি সেটি জেনে
নেই।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকরনে: পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন
সি থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। এছাড়াও এতে
রয়েছে লিউকোসায়ানিডিন, ক্যারটিনয়েড এবং অ্যামরিটোসাইড নামক
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। মানবদেহের
কেটে যাওয়া অংশকে ঢোকানোর জন্য অ্যান্টিএক্সিডেন্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: গবেষণায় পরীক্ষিত যে, পেয়ারাতে প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম থাকায় প্রতিনিয়ত পেয়ারা খেলে
শরীরের রক্তের লিপিড ও রক্তচাপ কমে যায়। সাধারণত পটাশিয়াম হৃদস্পন্দনে এবং
উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে: গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, পেয়ারার পাতায় ও
পেয়ারার রসে ডায়াবেটিস প্রতির উপাদান সমূহ থাকার কারণে ডায়াবেটিস
মেলাইটাসের চিকিৎসায় এটি খুবই কার্যকরী। এজন্য, আপনি যদি কচি পেয়ারার পাতা রোদে
শুকিয়ে গুড়ো করে এক চা চামচ পাতা এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে ৬ মিনিট ঢেকে
তারপর ছেঁকে নিয়ে খেলতে পারেন তাহলে আপনার ডায়াবেটিসের জন্য এটি অনেক
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে: পেয়ারা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য
করে কেননা এতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং লাইকোপিন এর মত অত্যধিক এন্টিঅক্সিডেন্ট
উপাদান। ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
পাকস্থলী সুস্থ রাখতে:পেয়ারা হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনে একটি কার্যকরী
উপায়। নিয়মিত পেয়ারা খেলে পাকস্থলী সুস্থ থাকে কেননা এতে রয়েছে
অ্যাস্ট্রিজেন্ট ও অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান যা পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে
সহায়তা করে।
থাইরয়েড গ্রন্থি কার্যকরী রাখতে: পেয়ারাতে কপার সমৃদ্ধ ট্রেস
থাকায় মানবদেহের থাইরয়েড গ্রন্থি কার্যকরী করতে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও এটি থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দূরীকরণে সহায়তা করে
থাকে।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিকরণে: কাঁচা পেয়ারা গুলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ
রয়েছে যেটা মানব দেহের চোখের জন্য উপকারী। এছাড়াও ভিটামিন এ চোখের কর্নিয়াকে
সুস্থ রাখার পাশাপাশি রাতকানা রোগ প্রতিরোধে বিশেষভাবে অবদান রাখে। এজন্য
আমাদের সকলেরই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা খাওয়া জরুরী।
মাসিকের ব্যথা দ্রুত উপসম করতে: অনেক নারী রয়েছে যারা পিরিয়ড বা
মাসিক চলাকালীন পেটে ব্যথা সহ্য করতে না পেরে ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন।
মাসিকের ব্যথা দ্রুত উপশম করতে পেয়ারার পাতা অনেক কার্যকরী। যদি কেউ পেয়ারার
পাতা চিবিয়ে অথবা রস বানিয়ে খাই তাহলে মাসিক চলাকালীন ব্যথা থেকে অনেকটা রেহাই
পাবে।
পেয়ারা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
পেয়ারা খাওয়ার সঠিক নিয়ম হচ্ছে ব্রেকফাস্ট বা সকালের নাস্তা খাওয়ার পরে
খাওয়া। এরপর দুপুরের খাবারের পরে পেয়ারা খাওয়া ভালো। তবে পেয়ারা সকালে খালি
পেটে না খাওয়ায় উচিত। সকালে খালি পেটে পেয়ারা খেলে এসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে। এছাড়াও, সকালে খালি পেটে পেয়ারা খাওয়ার ফলে এসিডিটি হওয়ার পাশাপাশি
খুব বেশি পেয়ারা খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথা হতে পারে।
পেয়ারা খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটি খাদ্যে যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি মাতাতিরিক্ত খাওয়ার ফলে এর
অপকারিতাও রয়েছে। অতিমাত্রায় পেয়ারা খেলে পেয়ারার খনিজ উৎপাদন এবং কিছু
ব্যাকটেরিয়া মিলে পেটে গ্যাস উৎপন্ন করে এবং পেটের মধ্যে ফাঁপা অনুভূত হয়।
এছাড়াও সকালে খালি পেটে পিয়ারা খেলে বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে।
খালি পেটে পেয়ারা হজম হতে ঝামেলা হয় যার কারণে পেটের মধ্যে ব্যথা অনুভূত হয়।
অন্যান্য ফলের মতো পেয়ারাতেও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়ে থাকে। সাধারণত
পেয়ারার চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত থাকলে সেই পেয়ারে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত
হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। এজন্য পেয়ারা কেনার আগে অবশ্যই ভালোভাবে দেখে
নিতে হবে।
পেয়ারা খেলে কি ওজন বেড়ে যায়
পেয়ারা খেলে ওজন বৃদ্ধি হয় না বড় পেয়ারা ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজন
কমানোর ক্ষেত্রে পেয়ারা অন্যান্য সকল ফলকে টেক্কা দিতে পারে। পেয়ারের মধ্যে
আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং প্রোটিন। এই দুইটি উপাদানে পরিপাকের ক্ষেত্রে
অনেক সময় লাগে যার ফলে ক্ষুধা লাগে না এবং পেট ভরা থাকে। এছাড়াও পেয়ারার
ফাইবার মেটাবলিজম কে নিয়ন্ত্রণ করে। কমপাকা পেয়ারায় প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ
অন্যান্য ফল যেমন আঙ্গুর, কমলালেবু, আপেল ইত্যাদি এর তুলনায় কম।
লেখকের শেষ কথা
বর্তমানে আমাদের দেশ সহ প্রায় প্রত্যেক এশিয়া দেশগুলোতে পেয়ারা একটি সহজলভ্য
ফল হিসেবে পরিচিত। শুধু ফলেই নয় এই গাছের পাতাতেও রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য
উপকারিতা। এজন্য যদি সম্ভব হয়, তাহলে প্রতিদিন একটি করেও না হয় তবে সপ্তাহে
অন্তত একটি করে হলেও একটি করে প্রতিটি মানুষের জন্য পেয়ারা খাওয়া উচিত।
পরিশেষে বলা যায়, সঠিক নিয়মে পেয়ারা খাওয়ার ফলে এর উপকারিতা সহজেই পাওয়া
যায়। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি এই বিষয়ে অল্প কিছু হলেও পেয়ারা
খাওয়ার উপকারিতা কি - পেয়ারা খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে সক্ষম
হয়েছেন। যদি এ বিষয়ে আপনাদের মাঝে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তাহলে অবশ্যই
আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।
পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কি - পেয়ারা খাওয়ার সঠিক নিয়ম নিয়ে লেখা আমাদের
আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও আপনার পরিচিতদের শেয়ার করতে ভুলবেন
না। স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট
ভিজিট করুন।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url