কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, সকলকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগতম। কিসমিস সারা বিশ্বের বিভিন্ন
অঞ্চলের উৎপাদিত হয়। কিসমিস রান্নার মাধ্যমে ও সরাসরি খাওয়া যায়। কিসমিস
খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার রয়েছে। তাই আজকে আমরা কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও
অপকারিতা কিসমিস খাওয়ার নিয়ম এর পুষ্টিগুণ এ্রর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে
আলোচনা করব।
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকেন, তাহলে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও
অপকারিতা - কিসমিস খাওয়ার নিয়ম এবং কিসমিসের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে
বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এই সম্পর্কে
বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কনটেন্ট সূচিপত্রঃ
ভূমিকা
কিসমিস আমরা প্রায় অনেকেই পছন্দ করি। আবার অনেকেই আছে কিসমিস নিয়মিত খেয়ে
থাকেন। কিসমিস খেতে অনেক সুস্বাদু এবং এর উপকারিতা অনেক বেশি। কিসমিসের উপাদান
আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে উপকার করে।
যেমন কিসমিস মানব দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে হজম শক্তি উন্নত করে রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণ করে ইত্যাদি আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। এজন্য আমরা আজকের আর্টিকেলে
জেনে নেব কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা কিসমিস খাওয়ার নিয়ম এবং কিসমিস এর
আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে।
কিসমিস কি
কিসমিস হচ্ছে একটি শুকনো ফল। এর ইংরেজি নাম হচ্ছে Raisin । এটি সাধারণত আঙ্গুর
ফলকে শুকিয়ে তৈরি করা হয়। আঙ্গুর ফলকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ দিন শুকিয়ে হয় এরপরে
কিসমিস প্রস্তুত হয়। কিসমিস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী খাদ্য। এতে
ফাইটোকেমিক্যাল, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাব পাওয়া যায়।
কিসমিস কত প্রকারের হয়
কিসমিস অনেক প্রকারের রয়েছে যেগুলো প্রচলিত সেগুলো হচ্ছে বাদামি কিসমিস,
সুলতানা কিসমিস এবং কালো কিসমিস।
বাদামী কিসমিস: বাদামি কিসমিস তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রায় ৩
সপ্তাহ আঙ্গুর ফলকে শুকিয়ে বাদামি রং হয়ে যায়। এটি তৈরি করার জন্য
বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ব্যবহৃত হয়। কিসমিসের আকার, রং এবং স্বাদ
আঙ্গুরের ধরণের উপর নির্ভর করে।
সুলতানা কিসমিস: সুলতানা কিসমিস তৈরি করার ক্ষেত্রে আঙ্গুর ফলকে
শুকিয়ে এই কিসমিস তৈরি করা হয়। সুলতানা কিসমিস তৈরি করতে আঙ্গুর ফল
শুকানোর আগে এটিকে এক ধরনের ভিজিয়ে রাখা হয়। যার ফলে এই কিসমিসের রং হালকা
বাদামি অথবা সোনালী হয়। এই কিসমিস আকারে ছোট এবং অন্য দুটি কিসমিসের তুলনায় এর
স্বাদ অনেক মিষ্টি হয়।
কালো কিসমিস: কালো কিসমিস সাধারণত কালো আঙ্গুর ফল থেকে তৈরি করা হয়।
কালো আঙ্গুর ফলকে প্রায় তিন সপ্তাহ যাবত শুকিয়ে কালো কিসমিস তৈরি করা হয়। এর
স্বাদ টক-মিষ্টি এবং এটি আকারে ছোট হয়ে থাকে।
কিসমিস এ কি কি পুষ্টিগুণ থাকে
কিসমিস এ অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে যেমন এতে রয়েছে খাদ্যশক্তি, প্রোটিন,
ফ্যাট,শর্করা, আয়রন, ফসফরাস, জিংক, কপার, থায়ামিন, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,
পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। এছাড়াও ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই,
ভিটামিন কে, ভিটামিন বি ৬, স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড, মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড
ইত্যাদি।
প্রতি ২০০ গ্রাম কিসমিসে কি পরিমাণ পুষ্টি থাকে
কিসমিসের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। আমাদের শরীরের জন্য খনিজ পদার্থ অনেক উপকারী।
বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আপনি যদি নিয়মিত কিসমিস খান তাহলে মানব দেহের জন্য এটি অনেক
কার্যকরী খাদ্যদ্রব্য হিসেবে কাজে আসবে। চলুন এবার জেনে নেই প্রতি দুইশ গ্রাম
কিসমিসে কি পরিমাণ পুষ্টির উপাদান থাকে-
- খাদ্যশক্তি (৫৯৮ কিলোক্যালরি)
- প্রোটিন (৬.১৪ গ্রাম)
- ফ্যাট (০.৯৫ গ্রাম)
- শর্করা (১১৮.৩৮ গ্রাম)
- ক্যালসিয়াম (১০০ মিলিগ্রাম)
- পটাশিয়াম (১৪৯৮ মিলিগ্রাম)
- সোডিয়াম (২২ মিলিগ্রাম)
- জিংক (০.৪৪ মিলিগ্রাম)
- ভিটামিন বি ৬ (০.৩৪৮ মিলিগ্রাম)
- ভিটামিন সি (৪.৬ মিলিগ্রাম)
- ভিটামিন ই (০.২৪ মিলিগ্রাম)
- ভিটামিন কে (৬.১০ মিলিগ্রাম)
- সেচুরেটেড এবং মনোসেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড সামান্য পরিমাণে থাকে।
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
হার্টের জন্য উপকারী: কিসমিস হার্টের জন্য অনেক উপকারী একটি খাদ্য উপাদান।
কেননা, কিসমিস খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা
বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে: কিসমিস ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সামান্য পরিমাণ হলেও
সহায়তা করে। এর কারণ হচ্ছে এর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
যা মানব দেহের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
রক্তশূন্যতা দূরীকরণে: কিসমিসে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন। যা
রক্তশূন্যতা অর্থাৎ লোহিত রক্ত কণিকার অভাব পূরণ করতে সহায়তা করে। যে সকল
ব্যক্তি রক্তশূন্যতায় হচ্ছেন তাদের জন্য কিসমিস অনেক উপকারী।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে: কিসমিস রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। যা
কষ্টে কাটেনা দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়াও হজম শক্তি উন্নত করে। এজন্য কিসমিস
খাওয়ার পরে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হতে পারে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে: কিসমিসের মধ্যে রয়েছে ডায়াটারি ফাইবার ও
প্রিবায়োটিক খাদ্য উপাদান। আমাদের পাকস্থলী সুস্থ রাখতে এবং স্বাস্থ্যকর
ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে সহায়তা করে যার ফলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য
করে।
শক্তির উৎস: কিসমিস খাওয়ার ফলে ব্যায়াম করার সময় রক্তের গ্রুপের
মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে এবং শরীরের শক্তি প্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য
করে।
মুখ ও দাঁতের জন্য: কিসমিস দাঁতের জন্য এবং মুখের জন্য খুবই উপকারী
খাদ্য উপাদান। কেননা এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটোকেমিক্যাল যা দাঁতের
মধ্যে ক্ষয়সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এছাড়াও মুখের ভেতরে
ক্ষতি সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে।
চুল ও ত্বকের জন্য উপকারী: আমাদের চুলের ক্ষতির জন্য ফ্রি-র্যাডিকেল
প্রধান কারণ হতে পারে। কিসমিসে রয়েছে এই ফ্রি-র্যাডিকেল থেকে চুলকে রক্ষা করা
পর্যাপ্ত ক্ষমতা। এজন্য বলা যায় কিসমিস চুলার জন্য খুবই উপকারী। কিসমিসে রয়েছে
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মানব দেহের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটি খাদ্যদ্রব্যের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি খাদ্যের পরিমাণ যদি অতিমাত্রা
হয়ে যায় তাহলে সেই খাদ্য থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাহলে চলুন
প্রতিমাত্রায় কিসমিস খাওয়ার ফলে কি কি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে-
- কিসমিস অতিমাত্রায় খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হতে পারে।
-
কিসমিস অতিমাত্রায় খাওয়ার ফলে শরীরের ওজনও বৃদ্ধি হতে পারে।
-
কিসমিস অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ার ফলে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের
ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পেতে পারে।
-
এছাড়াও অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথা,গ্যাস, পেটে ফোলা ভাব
ইত্যাদি সৃষ্টি হতে পারে।
- কিসমিস খাওয়ার ফলে অনেকের এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের খুব বেশি কিসমিস না খাওয়াই উত্তম।
কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
কিসমিস দ্বারা পরিপূর্ণভাবে উপকার পেতে হলে অবশ্যই এর নিয়ম মেনে খেতে হবে। এ
পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে কিছু কিভাবে খাওয়া যায় এই সম্পর্কে জানতে
পেরেছেন। এখন কিসমিস দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর উপায়ে কিভাবে
অন্তর্ভুক্ত করা যায় সেটি জেনে নেয়া যাক-
- কিসমিস ফল সালাতের সাথে এবং পিনাট বাটার এর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
-
কিসমিস সবজি জাতীয় অর্থাৎ ব্রকলি এবং গাজর এর সাথে সালাত হিসেবে খাওয়া
যায়।
-
কিসমিস প্যানকেকগুলিকে মিষ্টি করতে ব্যবহার করা যায়।
- এছাড়াও কিসমিস সকালে খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে।
শুকনো ফল অর্থাৎ কিসমিস প্রায় সকল ধরনের মানুষের জন্য উপকারী। এজন্য আপনি
প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম কিসমিস খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের
ক্ষেত্রে কিসমিসের পরিমাণ তাদের খাদ্য এবং ওষুধ অনুসারী হওয়া উচিত যার জন্য
আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কিসমিস ভিজিয়ে বা খালি পেটে খাওয়ার উপকারিতা
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রাতে ঘুমানোর পূর্বে চার থেকে পাঁচটি
কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, এরপরে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানিসহ
কিসমিসগুলো খেয়ে নিন। এছাড়াও এটি আপনার পাকস্থলী সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
মধুতে ভিজিয়ে কিসমিস খেলে কি হয়
আপনি কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অবশ্যই জানতে পেরেছেন। তবে এটাও জেনে অবাক হবেন
যে মধুর সাথে বা মধুতে ভিজিয়ে কিসমিস খেলে এর উপকার আরও দ্বিগুণ হয়। মধুর
মধ্যে যে উপাদান রয়েছে এর বৈশিষ্ট্যগুলি স্নায়ুতন্ত্র, কার্ডিওভাসকুলার
এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী।
কিসমিস কিভাবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করবেন
কিসমিস দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে হলে প্রথমে একটি বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে
হবে। পাত্রটি ফ্রিজে রাখার কোনো রকম আদ্রতা যেন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কেননা আর্দ্রতা কিসমিস পচে যাওয়া ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এই প্রক্রিয়ায় কিসমিস
প্রায় এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
লেখকের শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায়, সঠিক নিয়মে কিসমিস খেলে এর ভালো ফলাফল অবশ্যই সহজেই
পাওয়া যায়। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি এই বিষয়ে অল্প কিছু হলেও
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে
সক্ষম হয়েছেন। যদি এ বিষয়ে আপনাদের মাঝে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তাহলে
অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কিসমিস খাওয়ার নিয়ম নিয়ে লেখা আমাদের
আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও আপনার পরিচিতদের শেয়ার করতে ভুলবেন
না। স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট
ভিজিট করুন।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url