মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা - মেথি খাওয়ার নিয়ম
মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চায়। এজন্য আজকের আর্টিকেলে
মেথির পুষ্টি উপাদান, মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে
বিস্তারিত জেনে নিব। আশা করি, মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং মেথি খাওয়ার নিয়ম
সম্পর্কিত সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকেন তাহলে, মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং
মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন, আর কথা না
বাড়িয়ে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
ভূমিকা
মেথির স্বাদ তেতো হওয়ার কারণে আমরা অনেকেই এটি খেতে পছন্দ করি না। কিন্তু মেথির
পুষ্টিগুণ এবং এর উপকারিতা জানলে আপনি রীতিমত অবাক হয়ে যাবেন। এক গবেষণায় দেখা
গিয়েছে নিয়মিত মেথি খাওয়ার ফলে ভেজাল খাবার এবং দূষিত পরিবেশে সুস্থভাবে বেঁচে
থাকা সম্ভব হয়।
যুগের পরে যুগ ধরে আয়ুর্বেদিক, ইউনানী, কবিরাজি এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে মেথি অনেক
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এজন্য আমরা আজকে আর্টিকেলে জেনে নেব মেথি কি,
মেথির পুষ্টিগুণ, মেথির উপকারিতা মেথির অপকারিতা এবং এটি খাবার নিয়ম। তাহলে আসুন
আর দেরি না করে, এ সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
মেথির পরিচিতি
মেথির ইংরেজি নাম হচ্ছে Fenugreek এবং বৈজ্ঞানিক নাম Trigonella foenum-graecum ।
এটি একটি মৌসুমী জাতীয় গাছ থেকে উৎপাদিত। এই গাছের পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়।
মেথির শাক সাধারণত গ্রাম অঞ্চলের দিকে অনেক জনপ্রিয়। যুগ যুগ ধরে মেথি ইউনানী
আয়ুর্বেদিক ও লোকজ চিকিৎসালয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি পাঁচফোড়নের একটি
উপাদান যা মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মেথি থেকে স্টেরয়েডের উপাদানসমূহ তৈরি
হয়ে থাকে।
মেথির পুষ্টি উপাদান
প্রতি ১০ গ্রাম (১ টেবিল চামচ) মেথিতে যেসব পুষ্টির উপাদান রয়েছে সেগুলো হচ্ছে -- প্রোটিন (৩ গ্রাম)
- কার্বোহাইড্রেট (৬ গ্রাম)
- ফাইবার (৩ গ্রাম)
- চর্বি (১ গ্রাম)
- ক্যালোরি ৩৫
- আয়রন (২০ শতাংশ)
- ম্যাঙ্গানিজ (৫ শতাংশ)
- ম্যাগনেসিয়াম ( ৭ শতাংশ)
মেথির উপকারিতা কি
মেথি আমাদের স্বাস্থ্যের উপকারিতার জন্য বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে। আসুন আমরা
মেথির কয়েকটি উপকারিতা জেনে নেয়।
আরো পড়ুনঃ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন
গ্যাস্ট্রিক নিয়ন্ত্রণে: মেথি একটি ভেষজ উপাদান যা গ্যাস্ট্রিক
নিয়ন্ত্রণে অনেক কার্যকরী। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে মেথি পানিতে ভিজিয়ে এর রস
খেতে হবে। এজন্য রাতে ঘুমানোর আগে এক টেবিল চামচ মেথির রস এক গ্লাস পানিতে
মিশিয়ে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে খেতে পারেন। তাহলে গ্যাসট্রিক অনেকটাই
নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: মেথিতে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে ফাইবার যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এছাড়াও মেথি
মানবদেহের কার্বোহাইড্রেট নিয়ন্ত্রণ ও সুগার শোষণ করে। মেথি খাওয়ার ফলে
মানবদেহের ইনসুলিন নিঃসরণের মাত্রা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। এজন্য, ডায়াবেটিস
রোগীদের জন্য মেথি অনেক উপকারী।
ক্যান্সার প্রতিরোধে: এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে,
প্রতিনিয়ত মেথি খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। মেথিতে বিদ্যমান
ট্রাই-গ্লিসারাইড এর সাহায্যে এস্ট্রোজেন গ্রহণ করে মডিউলেটারের মত মানবদেহে কাজ
করে। তবে বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
কোলেস্টেরল কমাতে: মেথি খাওয়ার ফলে শরীরের কোলেস্টোলের পরিমাণ কমে যায়।
তাছাড়াও আপনার মানবদেহে যদি ইতিমধ্যে কোলেস্টেরলের ফলে কোনো ক্ষতি সাধন হয়ে
থাকে, তাহলে তা ধীরে ধীরে সেরে তুলবে। এজন্য কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি এমন
রোগীদের নিয়মিত মেথি খাওয়া জরুরি।
হজম শক্তি বৃদ্ধিকরণে: মেথিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা আপনার
শরীরে ধীরে ধীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। এছাড়াও নীতিতে যেসব
উপাদানগুলি রয়েছে সেগুলো হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য একদম উপযুক্ত। এজন্য যাদের
হজম শক্তি কম তাদের নিয়ম অনুযায়ী মেথি খাওয়া উচিত।
চুলের যত্নে: মেথিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ থাকে। এগুলো
চুল পড়া রোধ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি চুলকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। মেথিতে এক
ধরনের লিথিসিন নামক পদার্থ রয়েছে যা চুল পড়ে যাওয়া থেকে বাধা দেয়। এছাড়াও
যাদের মাথায় খুশকি রয়েছে তারা মেথি ব্যবহার করলে খুশকি দূর হয়ে যাবে।
ওজন কমাতে: মেথিতে বিদ্যমান প্রোটিন ফাইবার ক্যালোরি ম্যাগনেসিয়াম
ইত্যাদি এগুলো হজম শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরের মেদ গলিয়ে ওজন কমাতে বিশেষভাবে
ভূমিকা পালন করে। যারা ডায়েট করছেন তারা রান্নায় মত মেথি ব্যবহার করতে পারেন।
মেথির অপকারিতা কি
প্রতিটা খাদ্যের উপকারিতার পাশাপাশি সামান্য পরিমাণ অপকারিতাও রয়েছে। আসুন, আমরা
মেথির গুনাগুনের পাশাপাশি এর অপকারিতা জেনে নেই।
প্রতিনিয়ত মেথি ব্যবহারের ফলে ব্লাড সুগারের মাত্রা কমে যায়। কিন্তু একাধারে
অনেক দিন বা অতিমাত্রায় খেয়ে ফেললে ব্লাড সুগারের মাত্রা অনেক বেশি কমে যাবে
যার ফলে বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এটি ব্যবহারের ফলে সুগারের পরিমাণ হঠাৎ করে কমে যেতে পারে যা একজন ডায়াবেটিস
রোগীর জন্য বিপদজনক হয়ে দাঁড়াবে।
মেথি হচ্ছে মুখের মধ্যে এক ধরনের তিতা স্বাদের প্রদাহ তৈরি করে। যার ফলে মাথা
ঘোরা বা বমি বমি ভাব হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটানা দীর্ঘদিন মেথি খাওয়ার
ফলে শরীরের মধ্যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে মেথি বেশিদিন খেলে বাচ্চা হওয়ার সময়ের পূর্বে জন্ম
হতে পারে। এ ছাড়াও গর্ভপাতের সময় বিভিন্ন ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। এজন্য গর্ভবতী
মায়েরা মেথি খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসা পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
মেথি খাওয়ার নিয়ম
সাধারণত আমরা রান্নায় মশলা হিসেবে মেথি খেয়ে থাকি। তবে রান্নায় ব্যবহারের
পূর্বে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
আবার, আপনি এক গ্লাস গরম পানিতে এক চা চামচ মেথি ১০ থেকে ১৫ মিনিট থিতিয়ে নিয়ে
অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে সেই তরলটি পান করে নিন।
দুই চামচ মেথি ঘুমানোর আগে ভিজিয়ে রাখুন এরপর সকাল ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে
পানিটা ছেঁকে পান করুন। এছাড়াও সবুজ মেথি বিভিন্ন সবজিতে, সালাদ এবং মাছ ভাজাতে
ব্যবহার করে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি আপনার শরীরের পুষ্টির
উপাদানেরও যোগান দেবে। আশা করি, এ সকল বিষয়গুলো আপনি বুঝতে পেরেছেন।
শেষকথাঃ মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা - মেথি খাওয়ার নিয়ম
সঠিক নিয়মে মেথি খাওয়ার ফলে এর উপকারিতা সহজেই পাওয়া যায়। আশা করছি, এই
আর্টিকেলটি পড়ে আপনি এই বিষয়ে অল্প কিছু হলেও মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং
মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন। যদি এই বিষয়ে আপনাদের মাঝে কোন
প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং মেথি খাওয়ার নিয়ম নিয়ে লেখা আমাদের আর্টিকেলটি
আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও আপনার পরিচিতদের শেয়ার করতে ভুলবেন না। স্বাস্থ্য
ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url