কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী ১৮টি উপকারিতা - কাঠবাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম
পুষ্টিকর যেগুলো ড্রাই ফুড রয়েছে তার মধ্যে কাঠবাদাম হচ্ছে অন্যতম জনপ্রিয়
খাদ্য। আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী ১৮টি উপকারিতা
সম্পর্কে জানতে পারবেন। আশা করছি, কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী ১৮টি উপকারিতা জেনে
আপনি উপকৃত হবেন।
আপনি যদি আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকেন তাহলে কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী
১৮টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন, আর দেরি না
করে আজকের আলোচনার মূল বিষয়- বস্তুগুলো পেজ সূচিপত্রতে একনজরে দেখে নেওয়া
যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ
ভূমিকা
কাঠবাদাম একটি বৃহদাকৃতির গাছের ফলের বীজ যার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Terminalia catappa । কাঠ বাদাম গাছের ফলের অভ্যন্তরে তিন সেন্টিমিটার দীর্ঘ কয়েকটি বীজ থাকে
যার পরিপক্ক ফল থেকে বের করার পরে সরাসরি খাওয়া যায়। সাধারণত এই বীজগুলিই
কাঠবাদাম হিসেবে পরিচিত।
এটি ড্রাই ফুড এর মধ্যে বেশ জনপ্রিয় কেননা অন্যান্য ড্রাই ফুডের চেয়ে
পুষ্টিগুণ সবচেয়ে বেশি। কাঠবাদামে রয়েছে উপকারি ফ্যাট, ভিটামিন-ই,
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার বা আঁশ যা ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগ
প্রতিরোধ করতে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে কপার,
আয়রন ম্যাগনেসিয়াম, জিংক ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি।
প্রতিনিয়ত নিয়মিতভাবে কাঠবাদাম খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর
করতে সহায়তা করে। এজন্য আজকের এই আর্টিকেলে কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী ৩৪টি
উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি। তার আগে চলুন কাঠবাদাম খাওয়ার সঠিক
নিয়ম সেই বিষয়টি জেনে নিই।
কাঠবাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
কাঠ বাদাম কয়েকটি উপায়ে খাওয়া যায় যেমন কাঁচা, শুকনো, ভাজা কিংবা
পানিতে ভিজিয়ে রেখেও খাওয়া যায়। হবে তবে কাঠ বাদাম কিভাবে খেলে বেশি
উপকার পাওয়া যাবে সেই বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা কাঠ বাদামের
মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। যা ভাজা অথবা শুকনো বাদাম থেকে
পাওয়া সম্ভব নয়। বাদাম ভাজার ফলে এর কিছু কিছু পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
যেমন, এতে বিদ্যমান ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি তাপের কারণে নষ্ট হয়ে যায়।
কিন্তু অনেকেই কাঁচা খাওয়ার চেয়ে সামান্য ভেজে খেতে পছন্দ করে এভাবে
অবশ্য খেতে একটু বেশি সুস্বাদু মনে হয়। তবে সবচেয়ে বেশি উপকারী হবে রাতে
ঘুমানোর পূর্বে কাঠবাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে খেলে। আশা
করছি কাঠ বাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে পেরেছেন।
কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী ১৮টি উপকারিতা
কাঠবাদামে বিদ্যমান পুষ্টির উপাদান মানব শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আপনি যদি
প্রতিনিয়ত কাঠবাদাম খেতে পারেন, তাহলে আপনি বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই
থেকে মুক্তি পাবেন। নিম্নে আপনাদের মাঝে কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী ১৮ টি
উপকারিতা আলোচনা করা হলো।
১. স্ট্রোক প্রতিরোধেঃ কাঠবাদাম স্ট্রোক প্রতিরোধে করতে
সহায়তা করে। সাধারণত স্ট্রোক বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে যেমন উচ্চ রক্তচাপ
জনিত কারণে, ওজন বৃদ্ধির কারণে, ডায়াবেটিস ইত্যাদি সমস্যার
কারণে স্ট্রোক হয়ে থাকে। তবে এই কাঠবাদাম ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি ও
উচ্চ রক্তচাপ সকল সমস্যার থেকে রেহাই পেতে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ কাঠবাদাম নিয়ম মেনে খেলে হজম
শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যাদের হজমে সমস্যা আছে তারা নিয়মিত
কাঠবাদাম খেতে পারেন এতে আপনি উপকৃত হবেন।
৩. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ কাঠবাদাম নিয়মিত খেলে উচ্চ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক
রাখার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ (High Pressure) নিয়ন্ত্রণ করে।
৪. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে
গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাঠবাদাম এর মধ্যে
থাকা পুষ্টি উপাদান কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণেঃ বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দেয়। কাঠবাদামের রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে
আঁশ খাবারগুলো হজম করতে সাহায্য করে। সুতরাং কাঠবাদাম এই কোষ্ঠকাঠিন্য
দূর করতে ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিকরনেঃ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য
কাঠবাদাম উত্তম একটি খাদ্য। কাঠবাদামে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে মিনারেলস
এবং ভিটামিন-বি কোষগুলোকে শক্তিশালী করে তোলে এবং স্মৃতিশক্তি যথাযথভাবে
বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
৭. ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ সাধারণত কোলন ক্যান্সার থেকে
নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিনিয়ত কাঠ বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করে
তুলতে হবে। কেননা কাঠবাদামের রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ যা কোলন
ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেক কার্যকরী।
৮. হাড় মজবুত করণেঃ কাঠবাদাম মানবদেহের হাড় মজবুত করার
পাশাপাশি দাঁতের সুরক্ষার ক্ষেত্রেও খুবই উপকারী। কারণ এতে রয়েছে ফসফরাস
যা দাঁত মজবুত করতে ভূমিকা পালন করে।
৯. মস্তিষ্কের উন্নতি করনেঃ কাঠবাদাম প্রতিদিন নিয়মমাফিক
৫টা থেকে ৬টা ভিজে খাবার ফলে মস্তিষ্কের বিকাশ বা উন্নতি ঘটে।
১০. স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ বর্তমানে মেয়েদের স্তন
ক্যান্সারের ঝুঁকিপূর্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঠবাদামে বিদ্যমান
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-ই এর দুটি পুষ্টি উপাদান স্তন ক্যান্সার
প্রতিরোধে সহায়তা করে। প্রতিনিয়ত কাঠবাদাম খেলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি
অনেকটাই কমে যায়।
১১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে
আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কেননা এতে
রয়েছে শক্তিশালী এন্ড এক্সিডেন্ট ও ভিটামিন বিভিন্ন রোগ থেকে রেহাই বা
মুক্তি দেয়।
১২. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ কাঠ বাদামের তেলের
সাহায্যে ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। কারণ কাঠবাদামের টেনে রয়েছে
ভিটামিন এ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ার পাশাপাশি সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনি রশ্নি
থেকে রক্ষা করে থাকে।
১৩. শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করেঃ কাঠবাদাম শারীরিক শক্তি
বৃদ্ধি করতেও সহায়তা করে। নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ার পাশাপাশি কাঠ
বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, তাহলে কাঠবাদামে বিদ্যমান পুষ্টি
উপাদান মানবদেহের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
১৪. ডায়াবেটিসে উপকারীঃ ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন তাদের জন্য কাঠবাদাম খাওয়াটা অনেক
উপকারী। কেননা এত রয়েছে অতি স্বল্প পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট যা সহজেই
রক্তের সুগারের মাত্রা বাড়াতে দেয় না। এছাড়াও। এর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত
পরিমাণে ফাইবার যা ক্যালরি চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।
১৫. প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিরকরণেঃ কাঠবাদাম পুরুষের প্রজনন
ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। কেননা কাঠবাদামের রয়েছে মিনারেল,
ভিটামিন-ই, উপকারী ফ্যাট যা পুরুষের শুক্রাণুর গুণগত মান এবং পরিমাণ বৃদ্ধি
করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
১৬. মনোপজকালীন সমস্যা দূরকরণেঃ নারীদের ৪৫ থেকে ৫৫ বছর
বয়সের মধ্যেই মাসিক একেবারে বন্ধ হয়ে যায় এটিকে মেডিকেলের ভাষায় বলা
হয় মনোপজ। এ সময় প্রতিনিয়ত কাঠবাদাম খেলে মনোপজকালীন সমস্যা কিছুটা
কম হয়ে থাকে।
১৭. গরুর দুধের পরিবর্তে কাঠবাদামঃ যে সকল ব্যক্তিদের
গরুর দুধে এলার্জি অথবা অসুবিধা রয়েছে। সে সকল ব্যক্তিরা গরুর দুধের
পরিবর্তে কার্ড বাদামের দুধ খেতে পারেন এটি মানব শরীরের জন্য অনেক বেশি
উপকারী।
১৮. গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারীঃ এক গবেষণায় দেখা গেছে
গর্ভকালীন সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে গর্ভস্থ
সন্তানের জন্মগত ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা বেশিরভাগই কমে যায়। এর পাশাপাশি এ
সময় গর্ভবতী মায়ের জন্য কাঠবাদাম খাওয়া অনেক কার্যকরী।
কাঠবাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম
অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে কাঠবাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেলে
সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। কাঠবাদাম ভিজিয়ে রেখে খেলে একটি খেতে
অনেকটা নরম মনে হয় এবং তার সহজেই হজম হয়ে যায়। এছাড়াও এটি ভিজিয়ে
রাখা হলে সাইট্রিক এসিড এর পরিমাণ হ্রাস পায় যার মাধ্যমে খনিজ শোষণ
করতে কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি হয় না।
কাঠবাদামের আস্তরণের এক ধরনের ট্যানিন উপাদান রয়েছে যার ফলে এটি খেতে
একটু কম সুস্বাদু মনে হয় আবার এই উপাদানের পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরের
জন্য ক্ষতিকার প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কাঠ বাদাম ভিজিয়ে
রাখলে এই উপাদান পরিমাণে কমে যায়। সুতরাং, কাঠবাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার
খাওয়ার উপকারিতা সবচেয়ে বেশি। কাঠবাদাম কতক্ষণ এবং কিভাবে ভিজিয়ে রাখতে
হবে? এই প্রশ্নটি প্রায় বেশিরভাগ মানুষই করে থাকেন।
প্রথমে একটি বাটিতে পরিমাণ মতো কাঠবাদাম নিয়ে তাদের পর্যাপ্ত পানি ও
হালকা লবণ দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ৮ থেকে ১০ ঘন্টা পরে সেই ভেজানো
পানি ফেলে দিয়ে কাঠ বাদাম গুলো সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে ফেলুন। আর যদি
আপনি ভিজিয়ে রাখার পর সেটা সংরক্ষণ করতে চান তারা অবশ্যই
ঢাকনাযুক্ত বাটিতে করে ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে হবে।
শেষকথাঃ কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী ১৮টি উপকারিতা - কাঠবাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম
আশা করছি, এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী ১৮টি
উপকারিতা সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন। যদি এ বিষয়ে আপনাদের মাঝে কোন
প্রশ্ন বা মতামত থাকে বা কোথাও যদি বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে অবশ্যই
আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ইনশাআল্লাহ সমাধান দেয়ার
অবশ্যই চেষ্টা করব।
কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী ১৮টি উপকারিতা এই বিষয় নিয়ে লেখা আমাদের
আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও আপনার পরিচিতদের শেয়ার করতে
ভুলবেন না। স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে
আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url