টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার করা কেন জরুরি ২০২৪
আমরা বেশ কিছু সেবার মধ্যে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশনের ব্যবহার পেয়ে থাকি যেমন জিমেইল, গুগল, ব্যাংক ইত্যাদি। আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার করা কেন জরুরী। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছে যারা টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানিনা। যার ফলে আমাদের ব্যক্তিগত একাউন্টের নির্দিষ্ট ভাবে নিরাপত্তার ঘাটতি থেকেই যায়।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার করা কেন জরুরি এই বিষয়ে কি আপনি জানতে চান তাহলে এই পোষ্টটি আপনার জন্য। কেননা, আজ এই পোষ্টে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার করা কেন জরুরি সেই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা যারা টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সম্পর্কে জানতে চান তারা তারা পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পেজ সূচিপত্র
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) কোথায় ব্যবহার করা উচিত - Two-factor
authentication
ভূমিকা
আমাদের অ্যাকাউন্টগুলোর নিরাপত্তা ঘাটতির পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই সম্পূর্ণ
আর্টিকেলে আমরা টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সম্পর্কে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা
করব। আপনি যদি সম্পূর্ণ পোস্ট জুড়ে শেষ পর্যন্ত থাকেন, তাহলে টু-ফ্যাক্টর
অথেন্টিকেশন কি, টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) ব্যবহার করা কেন জরুরি,
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) কেন ব্যবহার করা হয়।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) কীভাবে কাজ করে? টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA)
কোথায় ব্যবহার করা উচিত, আর্থিক নিরাপত্তায় টু-ফেক্টর অথেন্টিকেশন এ সকল বিষয়ে
জানতে পারবেন। আশা করছি, আমরা আপনাকে এমন কিছু পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করব যার
মাধ্যমে আপনি উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ। তাহলে আসুন, আর দেরি না করে টু-ফ্যাক্টর
অথেন্টিকেশন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) কি - What is Two-Factor Authentication?
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) হচ্ছে এক ধরনের নিরাপত্তা যাচাই করণ পদ্ধতি। যেই
প্রক্রিয়ায় ব্যবহারকারীরা তাদের নিজস্ব লগইন কার্যক্রম যাচাই করার জন্য দুটি
ভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রদান করে থাকে।
আবার, টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) সম্পর্কে যদি আরও সহজ করে বলতে হয় তাহলে
আমরা যখন স্বাভাবিক নিয়মে জিমেইল, ফেসবুক, গুগল একাউন্ট ইত্যাদি অথবা অনলাইনে
কোন অ্যাকাউন্ট লগইন করার জন্য শুধু ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হয়
কিন্তু পাসওয়ার্ড দিলে লগইন করার পরে যদি দ্বিতীয় স্তরে নিরাপত্তা যাচাই করে
তাহলে সেই স্তরকে বলা হয় টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) ব্যবহার করা কেন জরুরি - Why is it important to use two-factor authentication
বর্তমানে অনলাইন ভিত্তিক একাউন্ট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নিরাপদ রাখার
ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পাসওয়ার্ড এর উপর পুরোপুরি নিরাপত্তা নির্ভর করা যায় না।
আপনার প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ একাউন্ট গুলো হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
এজন্য অনলাইনের এসব অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার জন্য আমাদের টু-ফ্যাক্টর
অথেন্টিকেশন (2FA) ব্যবহার করা জরুরি।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন একটি সাইবার নিরাপত্তা কর্মসূচি যা নির্দিষ্ট কোন
ডিজিটাল ডিভাইসে অনলাইন ভিত্তিক যেগুলো ভার্চুয়াল একাউন্ট রয়েছে সেগুলোতে
শুধুমাত্র লগইন বা লেনদেনের জন্য বৈধ। সংবেদনশীল ডাটা এক্সেস এবং সিস্টেমগুলো
নিয়ন্ত্রণ করার জন্য Two Factor Authentication এর ব্যবহার দীর্ঘদিন থেকেই হয়ে
আসছে।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) কেন ব্যবহার করা হয়? - Why is Two-Factor Authentication used?
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহারকারীর গুরুত্বপূর্ণ বা প্রয়োজনীয় তথ্য
সংশ্লিষ্ট ভাবে ডেটা সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। সাধারণত এটি একটি
ফেক্টর প্রদান করে যা ব্যবহারকারীর যাচাই করুন পদ্ধতির তুলনায় আরো উচ্চ
লেভেলের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহারকারী প্রথমে
একটি পাসকোড প্রদান করতে হয় তারপর পরবর্তী পদক্ষেপে ব্যবহারকারীর নিশ্চয়তার
জন্য আরেকটি কোড প্রদান করতে হয়।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন প্রক্রিয়াটি একটি শক্ত নিরাপত্তার অতিরিক্ত স্তর যার
মাধ্যমে অন্য কাঙ্খিত ব্যবহারকারীদের পক্ষে নিজস্ব একাউন্ট এর এক্সেস পাওয়া
কঠিন করে তোলে। কারণ মূল ব্যবহারকারীর পাসপোর্ট যদি অন্য কেউ জানা সত্ত্বেও টু
ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন পাস করার জন্য সঠিকভাবে যাচাই করার জন্য আরও একটি পাসকোড
প্রয়োজন পড়বে। সুতরাং নিজের একাউন্ট সুরক্ষিত রাখার জন্য জন্য টু ফ্যাক্টর
অথেন্টিকেশন ব্যবহার করা হয়।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) কীভাবে কাজ করে? - How does two-factor authentication work?
অনলাইন ভিত্তিক অ্যাকাউন্ট লগইন করার ক্ষেত্রে প্রথমে ইউজার নেম অফ পাসওয়ার্ড দিতে হবে। তারপর পরবর্তী ধাপে ব্যবহারকারীর কাছে একটি কোড চাওয়া হবে যেটি আগে থেকেই তার ফোনে টু ফেক্টর অথেন্টিকেশন এপ্লিকেশন সফটওয়্যারটি ইনস্টল করা আছে সেই এপ্লিকেশন থেকে।
এছাড়াও ইমেইল মেসেজ বা কল মোবাইলে আসা নোটিফিকেশন এর মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ ভাবে কর্তৃপক্ষ 2FA সম্পন্ন করতে পারবে। নিরাপত্তার দ্বিতীয় স্তরটি পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারলে ওই অ্যাকাউন্ট লগইন যথাযথভাবে হবে। তবে প্রতিবার লগইন করার ক্ষেত্রে টুএফে পদ্ধতিতে নতুনভাবে পুনরায় বার বার কোড আসবে যেটা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য কার্যকর থাকে।
একবার ব্যবহার করা হয়ে গেলে পরবর্তীতে এই কোড আর ব্যবহার করা যায় না।
প্রত্যেকবার লগইনের ক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল পাসওয়ার্ড চাইবে যেটাকে ওয়ান টাইম
পাসওয়ার্ড বা ওটিপি বলা হয়। প্রচলিত টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ইমেইল, এসএমএস ও
ভয়েস কল এবং মোবাইল অ্যাপ নোটিফিকেশন এই তিনটি সেবার মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করা
হয়।
মাইক্রোসফট অথেনটিকেটর ও গুগল অথেন্টিকেটর এ দুটি হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় টু
ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) অ্যাপ্লিকেশন। টু এফ এ ব্যবহার করার জন্য অনলাইন
ভিত্তিক একাউন্টগুলোর সেটিংস থেকে অবশ্যই আপনাকে এই অপশনগুলি চালু করে নিতে
হবে।
এই অ্যাপ্লিকেশন গুলো গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপেল অ্যাপ স্টোর থেকে ফ্রিতে পেয়ে
যাবেন। এই অ্যাপ্লিকেশন গুলো ব্যবহারের পাশাপাশি আপনার অ্যাকাউন্টগুলোতে মোবাইল
নাম্বার অথবা ব্যাকাপ ইমেল ঠিকানা সংযুক্ত করবেন। কোন কারণে যদি অ্যাপ্লিকেশন
গুলো ব্যবহার করতে সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে মোবাইল নম্বর অথবা ইমেইলের
মাধ্যমে ওটিপি এর সাহায্যে অ্যাকাউন্ট করতে পারবেন।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) কোথায় ব্যবহার করা উচিত - Two-factor
authentication
Where should it be used?
যে সকল অনলাইনভিত্তিক সেবা টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন এর মাধ্যম অফার করে থাকে
সেগুলো প্রত্যেকটিতে নিরাপত্তার সহিতে এই সেবা গ্রহন করা উচিত। কেননা, একটু
ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার করলে নিজস্ব একাউন্টগুলোর নিরাপত্তা পাওয়া যাবে
তার সাথে এটি ব্যবহার করাও সহজ। এ ছাড়াও আপনার আর্থিক ক্ষতি বা হারিয়ে
যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নিজেকে রক্ষা করার একটি মাধ্যম থাকবে যা আপনার জন্য এটি
অনেক কার্যকরী হবে।
কারণ, কোন পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের মাধ্যমে পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি
টুএফএ চালু করে রাখলে আপনার অনলাইন ভিত্তিক একাউন্টের নিরাপত্তা অনেকাংশেই
বেড়ে যাবে। অপরদিকে আপনার প্রাইমারি ইমেইল একাউন্টে দ্বিতীয় পদ্ধতি হিসেবে এই
টুএফএ সেবাটি গ্রহণ করা উচিত।
ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) জেনারেট করার মাধ্যম কি কি
ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড জেনারেট করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। তবে
বাংলাদেশে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড প্রেরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত এবং
জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে নিজস্ব স্মার্টফোনে ক্ষুদেবার্তা প্রেরণ করা। মোবাইলের
টেক্সট মেসেজ ছাড়াও আরো বিভিন্ন মাধ্যমে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড প্রেরণ করা
যায়।
তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইমেইলের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন কোড প্রদান করা, হার্ডওয়ার
টোকেন ব্যবহার করে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড জেনারেট করা, ভয়েস কলের সাহায্যে
ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড জেনারেট করা, মোবাইল অ্যাপ নোটিফিকেশন ব্যবহার করে
পাসওয়ার্ড জেনারেট করা ইত্যাদি।
আর্থিক নিরাপত্তায় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড - One time password on financial security
বর্তমানে আর্থিক নিরাপত্তাই ওয়ান্টেড পাসওয়ার্ড বহুলভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
এটি একটি আলাদা লেয়ার সিকিউরিটি হিসেবে আর্থিক খাতের নিরাপত্তার জন্য ব্যাংকিং
সেবায় ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ই-কমার্স ট্রানজেকশন এবং
ইন্টারনেট ব্যাংকিং ফান্ড ট্রান্সফার অনলাইন ভিত্তিক মাধ্যমগুলো বিভিন্ন ধরনের
ব্যাংকিং সেবা গ্রহণকালে টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন পদ্ধতিতে যাচাইকরণের মাধ্যমে
ব্যাংক তাদের কাস্টমারদেরকে ভেরিফাই করছে।
এছাড়াও বৈধতা প্রমাণস্বরূপ কিনা সেটি উক্ত লেনদেনের জন্য কাস্টমারকে অনুমোদন
বা অথোরাইজ দিচ্ছে। বর্তমানে প্রধান কার্ড নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার তাদের কার্ড
হোল্ডারদের অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য ব্যবহারকারীদের ভেরিফাই করছে। বিশ্বের
অন্যতম বহুল প্রচলিত কার্ড নেটওয়ার্ক ভিসা তাদের ব্যবহারকারীদের কে
ভেরিফিকেশনের জন্য ভেরিফাইড বাই ভিসা (Varified by Visa) হিসেবে টু ফেক্টর
অথেন্টিকেশন চালু করেছে।
অপরদিকে আরেকটি প্রোভাইডার মাস্টার কার্ড চালু করেছে সেটি হচ্ছে মাস্টার কার্ড
সিকিউর কোড। আবার বিশ্বে চাহিদা সম্পন্ন নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার আমেরিকান
এক্সপ্রেস হিসেবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহকদের জন্য ই-কমার্স লেনদেনের জন্য
চালু করেছেন আমেরিকান এক্সপ্রেস সেফকি (American Express Sefkey)।
উপসংহারঃ টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার করা কেন জরুরি
পরিশেষে বলা যায়, আপনার নিজস্ব একাউন্ট গুলোর নিরাপত্তার জন্য আপনি অনলাইন
ভিত্তিক যে সকল সেবা গ্রহণ করেন সেগুলোতে যদি টুএফএ সেবাটি চালু থাকে তাহলে
অবশ্যই আপনার জন্য সেই সেবাটি গ্রহণযোগ্য হবে। এটি সাধারণত আপনার নিয়মিত
পাসওয়ার্ড এর থেকে আপনাকে বেশি সুরক্ষা দেবে। কেননা, 2FA বা OTP অনলাইন
ভিত্তিক একাউন্টের নিরাপত্তা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সম্পর্কিত আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে
থাকলে কমেন্ট ও আপনার পরিচিতদের শেয়ার করতে ভুলবেন না। স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি
সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url