পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কি ঔষধ খাবেন?
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া নিয়ে চিন্তিত? আমরা আজকে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে
কি ঔষধ খাবেন? সেই সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা
হলে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায় যার ফলে শূন্যতা দেখা
দেয়। এজন্য আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য অনেক জরুরী। আশা করছি, ডায়রিয়া
সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জেনে উপকৃত হবেন।
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকেন তাহলে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কি
ঔষধ খাবেন? এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন, আর কথা না বাড়িয়ে
আজকের আলোচিত টপিকগুলো পোষ্ট সূচিপত্রতে এক নজর দেখে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে
নেওয়া যাক।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ
ভূমিকা
আমারও প্রায় সকলেই জানি যে পেট খারাপ হলেই পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয়ে
যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকের পেট খারাপ হলে পাতলা পায়খানার ডায়রিয়া হয়েও
যায়। কিন্তু, পাতলা পায়খানা পাঠায় দেয়া হলে কোন ওষুধ খেলে এই
রোগটি দ্রুত সেরে যায় এই বিষয়টি হয়তো অনেকেই জানি না।
অনেকে ভাবেন যে শুধু খাবার স্যালাইন খেলে পাতলা পায়খানা দূর হয়ে যায়। শুধু যে
খাবার স্যালাইন খেলে এই রোগ দূর হয়ে যায় এটা কিন্তু সঠিক ধারণা নয়। পাতলা
পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে সঠিক ঔষধ নিয়মিত সেবন করতে হয় তাহলেই দ্রুত সুস্থ
হওয়া যায়।
আমরা আজকের ব্লগে ডায়রিয়া হওয়ার কারণ কি, ডায়রিয়ার সঠিক চিকিৎসা
কি, ডায়রিয়ায় সিরাপ এর নাম কি, পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম
কি, বেশিদিন ডায়রিয়া হলে কোন ঔষধ এবং কিভাবে খেতে হয়, বাচ্চাদের পাতলা
পায়খানা হলে কোন ঔষধ খেতে হবে এবং ডায়রিয়া হলে যাদের ওষুধ খাওয়া যাবে না এ সকল
বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন, আর দেরি না করে বিস্তারিত জেনে
নেওয়া যাক।
ডায়রিয়া হওয়ার কারণ কি
ডায়রিয়া হওয়ার কারণ হচ্ছে ফুড পয়েজনিং, দূষিত পানি, পরিবেশ ইত্যাদি। তবে
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় তেল চর্বিযুক্ত ও অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া খাওয়ার ফলে
পেট খারাপ হয়ে যায়। আর পেট খারাপ হলে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হওয়ার সম্ভাবনা
থাকে। এছাড়াও ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। মূলত
যেগুলো কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে সেগুলো হচ্ছে-
আরো পড়ুনঃ Normens ট্যাবলেট খেলে কি হয় জেনে নিন
- দূষিত বা ময়লা পানি
- অতিমাত্রায় তেল চর্বি এবং প্রতি ভাজা পোড়া খেলে
- ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে
- বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে
- অতিরিক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করলে
ডায়রিয়া সিরাপ এর নাম কি
কেউ কেউ আছেন যারা অসুখ-বিসুখ হলে ট্যাবলেট খেতে পারে না। এজন্য তারা ডায়রিয়া
ভালো হওয়ার জন্য সিরাপ কে বেছে নেয়। আসুন আমরা ডায়রিয়ায় সিরাপ এর নাম কি
সেটি জেনে নেই। এই বিষয়ে ডাঃ মো যায়েদ বলেন, আমার জানামতে সেতু ড্রাগ এর যে
কুটজারিষ্ট সিরাপটি রয়েছে সেটি ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা সেরে উঠতে ভালো কাজ
করে।
তিনি আরো বলেন, এই ওষুধটি আমি অধিকাংশ রোগীদেরকে খাওয়ার জন্য বলেছিলাম বেশিরভাগ
রোগী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে গেছে। তবে এই ওষুধ ইসুবগুলের ভুষির সাথে ১-২
চা চামচ ওশুধ মিশিয়ে সকালে ও রাতে এক গ্লাস পানির সাথে গুলিয়ে খেয়ে নিতে হবে।
ডায়রিয়ার হলে সঠিক চিকিৎসার ঔষধ কি
ডায়রিয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে ওর-স্যালাইন। তবে অনেক ক্ষেত্রে
রোগের লক্ষন অনুযায়ী স্যালাইনে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয় না। এজন্য
প্রাপ্তবয়স্কদের কে স্যালাইনের পাশাপাশি মেট্রোনিডাজল (Metronidazole)
৪০০ মিগ্রা ট্যাবলেট ৮ ঘণ্টা পরপর ৫দিন খেতে হয়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে
মেট্রোনিডাজল সিরাপ ১ চা চামচ পরিমাণ দিনে সর্বোচ্চ ৩বার দেওয়া
যায়।
তবে এক বছর কম বয়সী শিশুদের এই সিরাপ সেবন না করাই উচিত। এর পরেও যদি
ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে না আসে তবে সিপ্রোফ্লক্সাসিন (Ciprofloxacin) ৫০০
মিগ্রা ট্যাবলেট প্রথম কয়েকদিন দুটি করে এবং এক সপ্তাহ পরে ২৪
ঘন্টার পর পর একটি ট্যাবলেট পরের এক সপ্তাহ খেতে হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী এর
সাথে নিটাজক্সানাইট (Nitazoxanite) ৫০০ মিগ্রা দিনে দুই বার এবং শিশুদের
জন্যে সাসপেনশন তৈরিকৃত পাউডার পাওয়া যায়।
পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম কি
পাতলা পায়খানা ট্যাবলেট এর নাম কি এটি অনেকেই জানতে চায়। আপনি যদি পাতলা
পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম জেনে থাকেন তাহলে আপনার অথবা আপনার পরিবারের কারও
কখনো পাতলা পায়খানা হয়, তখন সেই ঔষধ সেবন করে অতি সহজেই পাতলা
পায়খানা থেকে মুক্তি পাবেন।
সাধারনত পাতলা পায়খানা হলে বিষেশজ্ঞ চিকিৎসকরা যেসব ঔষধগুলো সেবন করতে
বলে,সেসব ঔষধের লিষ্ট নিচে উল্লেখ করেছি। এই ঔষধগুলো
আপনি ফার্মেসীতে গেলেই পেয়ে যাবেন। পাতলা পায়খানা ট্যাবলেট এর নামগুলো
হচ্ছে-
- Flagyl 400mg (Ziska Pharma Limited) - 1TK Per Pitch
- Amodis (Square Pharma Limited) - 1.55Per Pitch
- Metryl (Opsonin Pharma Limited) - 2TK Square Company
- Zox Tablet (Square Pharma Limited) - Around 10 TK Per Pitch
- Metro 400mg (Ziska Pharma Limited) - 1TK Per Pitch
- Aprocin 500mg (Aristo Pharma Limited) - 15TK Per Pitch
- Flotin 500mg (Renata Pharma Limited) - 15 TK Per Pitch
ডায়রিয়া বেশিদিন হলে কোন ঔষধ এবং কিভাবে খেতে হয়?
বেশিদিন ডায়রিয়া হলে কোন ঔষধ এবং কিভাবে খেতে হয়? এই বিষয়েও ডাঃ যায়েদ বলেন,
বেশিদিন ডায়রিয়া হওয়ার অনেক কারণ থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইবিএস
অর্থাৎ ইরিটেবল ভাওয়েল সিনড্রোম (Irritable Vowel Syndrome) এর কারণে
হয়ে থাকে। যদি আইবিএস হয়ে থাকে তাহলে প্রতিনিয়ত ডায়রিয়া হলে যেসব ওষুধ খেতে
হয় সেসব ঔষধ না খেয়ে আমি উপদেশ দেব আয়ুর্বেদিক সমৃদ্ধ
ঔষধ কুটজারিষ্ট সিরাপ খেতে।
এটি বয়স, ওজন এবং লক্ষন অনুযায়ী দিনে ৩ বার ২-৩ চা চামচ খেতে হবে। এভাবে আপনি
যদি প্রতিনিয়ত টানা ২ মাস খেতে পারেন তাহলে আশা করছি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে
যাবেন। এছাড়াও ইউনানী সিরাপও ভালো কাজে দেয়। আপনি যদি কুটজারিষ্ট সিরাপ
সচরাচর না পেয়ে থাকেন তাহলে ইউনানী সিরাপ এই নিয়মে খেতে পারেন। আশা করছি,
বেশিদিন ডায়রিয়া হলে কোন ঔষধ এবং কিভাবে খেতে হয়? এর উত্তরটি জানতে
পেরেছেন।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে কোন ঔষধ খেতে হবে?
বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে অনেক পিতা-মাতারা ঘাবরিয়ে যায়। কেননা ডায়রিয়া হলে
প্রচুর পরিমানে শূন্যতা দেখা দেয়। আর পানি শূন্যতা দেখা দিলে বাচ্চাদের
শরীর অনেক তাড়াতাড়ি নিস্তেজ হয়ে যায়। একজন প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে বাচ্চদের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে। বাচ্চা যদি ৬ মাসের কম হয়ে থাকে তাহলে
মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই।
এরপরেও যদি কোনো উন্নতি না হয়, তাহলে এ্যারিথ্রোমাইসিন (Erythromycin 50mg)
ড্রপ ৫০মিগ্রা সেবন করতে পারবে। বাচ্চার ওজন ও বয়স অনুযায়ী সর্বোচ্চ
দিনে ৩-৪ বার সেবন করতে পারবে। এভাবে ৫-৬ দিন খাওয়ানো যাবে।
এ্যারিথ্রোমাইসিন এর এমাইসিন অথবা এরোমাইসিন যেকোন একটি হলেই হবে এই দুইটি
ঔষধই ভালো কাজ করে।
ডায়রিয়া হলে যাদের ওষুধ খাওয়া যাবে না
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে আমরা প্রায় সকলেই ওষুধ সেবন করি। আবার
হঠাৎ করে ডায়রিয়া হলে অনেকে এটি দ্রুত সারানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ
খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু ডায়রিয়া হলে আসলে কাদের ওষুধ
খাওয়া উচিত না এই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া উচিত। তাহলে চলুন, ডায়রিয়া হলে
যাদের ওষুধ খাওয়া যাবে না এই বিষয়ে ডা. মোহাম্মদ যায়েদ কি বলেছেন সেটি
জেনে নিই।
- প্রথমত ১২ বছরের কম বয়সী যারা শিশু রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া বন্ধ করার ওষুধ সেবন যাবে না।
- আবার যেসব ওষুধে অ্যাস্পিরিন (ASPIRIN) রয়েছে সেসব ওষুধ ১৬ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের সেবন করা যাবে না। যেসব ওষুধে অ্যাস্পিরিন আছে সেসব ওষুধের নামের নিচে ASPIRIN লিখা থাকবে। এই বিষয়টি খেয়াল করে ওষুধ খাওয়াবেন।
-
ডায়রিয়া যদি খুব গুরুতর হয় সেজন্য দ্রুত পাতলা পায়খানা বন্ধ করার
ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে অবশ্যই
চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শেষকথাঃ পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কি ঔষধ খাবেন?
পরিশেষে বলতে চায় যে, পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া অনেকের কাছে একটি বিরক্তিকর
রোগ। কেননা, যদি একবার ডায়রিয়া হয়ে যায় তাহলে আপনাকে দিনে কতবার টয়লেটে যেতে
হবে যার হয় একমাত্র সেই ভালো জানে। আর বারবার টয়লেটে যাওয়াটা বিরক্তিকর হয়ে
ওঠে। আপনিও চাইবেন না সমস্ত কাজ কাম রেখে বারবার টয়লেটে যেতে।
এই রোগে কয়েকবার মলত্যাগ করলেই আমাদের শরীর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায়। সুতরাং
আপনার যদি পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয়ে থাকে, তাহলে এই পোস্টের উল্লেখিত
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার ট্যাবলেটের নাম গুলো দেখে যেকোনো ফার্মেসি
থেকে ঔষধগুলো নিয়ে এসে খেলে আশা করছি অনেক দ্রুত সেরে যাবে।
আমি ইতিমধ্যে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কি ঔষধ খাবেন? এবং
ডায়রিয়া সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা
করছি, আপনারা জেনে উপকৃত হয়েছেন। আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলে কোন বিষয়ে
বুঝতে না পারেন, তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। তাহলে আমি যথাযথভাবে
সঠিক তথ্য দিয়ে আপনাকে সাহায্য করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কি ঔষধ খাবেন? এই বিষয়ে লেখা আমার আজকের
আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে শেয়ার ও কমেন্ট করতে ভুলবেন না। স্বাস্থ্য ও
প্রযুক্তি সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট
নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url