গরমে শরীর সুস্থ রাখার উপায় এবং হিটস্ট্রোক হলে করনীয়

আবহাওয়ার তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহের তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। এজন্য প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখতে হবে। তাই এসময় কেউ যদি নিজের দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার কৌশল আয়ত্ত করতে পারেন,তাহলেই প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রেখে সম্ভব হবে অসুস্থতার হাত থেকে রেহায় পাওয়া।
প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখার উপায় এবং হিটস্ট্রোক হলে করনীয়
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকেন তাহলে, প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখার উপায় এবং হিটস্ট্রোক হলে করনীয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন, আর দেরি না করে আজকের মূল বিষয়বস্তুগুলো পেজ সূচিপত্রতে একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ

ভূমিকা

সাধারণত গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড পরিমাণে তাপদাহের সৃষ্টি হয়। এই তাপদাহ সহ্য করতে না পেরে আমরা অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছি এজন্য গরমকালে সুস্থ থাকতে হলে, গরমকে মোকাবেলা করতে হবে। কেননা অতিরিক্ত গরমের জন্য মানবদেহে মিলছে নানা রকম সমস্যা।

সূর্যের প্রখর তাপে শরীরে পানি শূন্যতাও দেখা দিচ্ছে। দেহ থেকে বেশি পরিমাণে ঘাম বের হয়ে যাওয়াই নষ্ট হচ্ছে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম এর ভারসাম্য।তাই এই অস্বাভাবিক গরম হয়ে যেতে পারে হিট স্ট্রোকের মারাত্মক সমস্যা।

কী পরিমাণ পানি পান করবেন

প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখার জন্য সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে বেশি পরিমাণে পানি পান করবেন। আমরা সকলেই জানি পানির অপর নাম জীবন সুস্থভাবে বেচে থাকতে হলে পানির গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। সুস্থ থাকতে হলে কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়।
শরীরে প্রচুর পরিমানে পানির অভাব দেখা দেয় যা আমাদের শরীরকে অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেয়, এজন্য প্রতিদিন ৪-৫ পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তলুন। পানি শরীরে প্রতিদিন রক্ত তৈরি থেকে একের অধিক গুরুত্বপূর্ণ কার করে থাকে। মানবদেহ থেকে বর্জ্যপদার্থ বাইরে বের করে দেয় যার ফলে জয়েন্ট পিচ্ছিল করতে সহায়তা করে।

একজন ব্যক্তির কি পরিমাণে পানি পান করবে তা নির্ভর করবে তার উচ্চতা,ওজন ও দৈনন্দিন কাজের মাত্রার উপর।এজন্য প্রতিদিন পুরোদিনে ৪-৫ লিটার পানি পান করা আবশ্যক।যারা কাজের ব্যস্ততা নিয়ে সারাদিন বাইরে থাকেন তারা অবশ্যই সাথে একটি পানির বোতল সংরক্ষন করে রাখবেন। যেই মুহূর্তে পানি পিপাসা আসবে সেই মুহূর্তে পানি পান করুন।

যেদিন প্রচন্ড তাপমাত্রা তাকবে সেদিন দুপুরের দিকে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার চেষ্টা করবেন। জরুরী হলে প্রয়োজনে ছাতা বা টুপি সাথে রাখবেন। পরশেষে যারা এসি রুমে থাকেন, তারা নিয়ম মাফিক পানি পান করুন। এতে করে শরীর ডিহাইড্রেট হতে বেচে যাবে।

গরমে যেসব খাবার খাবেন

প্রচন্ড গরমে আমাদের শরীর অতি সহজেই দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রচন্ড পরিমানে ঘেমে যাওয়ার করনে আমাদের মানবদেহ থেকে তরল পদার্থ বের হয়ে আসে।এ কারনে বেশিরভাগ মানুষকে গ্রীষ্মেকালে প্রায়ই পানিশূন্যতার শিকার হতে হয়। কাজ করার মত মনোবল বা শক্তি একেবারেই থাকে না।এমতবস্থায় খাওয়া দাওয়ার উপর বেশ নজর দেওয়াটা অত্যন্ত জরুরী হয়ে উঠেছে।

মাত্রাতিরিক্ত গরমে এমন খাবার খেতে হবে যাতে পেটকে ঠান্ডা রাখে। সকালের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন দই-চিড়া অন্যতম।পানি জাতীয় খাবারের পরিমান বাড়িয়ে দিতে হবে এর মধ্যে ফলের জুস থাকতে পারে,লেবুর শরবত থাকতে পারে এবং ডাবের পানি থাকতে পারে। এসব খাবার শরীরকে সুস্থ ও ঠান্ডা বা শীতল রাখতে সক্ষম হয়।

এছাড়াও কাচা সবজির মধ্যে গাজর,শসা খাওয়ার পরিমান বাড়িয়ে দেওয়া।এছাড়াও যেসব খাদ্যে ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম,জিন্ক,প্রোটিন ইত্যাদি রয়েছে এই সব খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তভূক্ত করতে হবে। কেউ যদি ধূমপায়ী হতে থাকে তাহলে সেগুলোর পরিমান কমিয়ে দেতে হবে। যার ফলে প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখতে পারবেন।

গরমে যেসব খাবার খাবেন না

আমরা অনেকেই গরমে বাইরে তেল জাতীয় খাবার খেয়ে থাকি যা একেবারেই উচিত নয়। কেননা,    গরমে বাইরের তেলজাতীয় খাবার শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা আমাদের মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আবার আমরা অনেকে প্রচন্ড গরমে কার্বনেটেড জাতীয় খাবার প্রচুর পরিমানে খেয়ে থাকি যা একদমই ঠিক নয়।

এইগুলো শরীরকে কিছুসময় ঠান্ডা বা তৃপ্তি মেটালেও এতে কোনও পুষ্টিগুন নেই বললেই চলে। এজন্য বাইরের খাবার,ভাজাপোড়া বা অন্যজাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।এ সময় কম ঝালে পাতলা ঝোলের তরকারি খাইয়া সবচেয়ে উত্তম।

গরম শুকনো ফল কমিয়ে টাটকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। এছাড়াও মানবদেহে তাপ উৎপাদন করে এমন খাবার যেমন চিনি,গুড়,মধু ইত্যাদি এগুলোর পরিমানটা একটু কমিয়ে দিতে হবে। আবার কিছু সবজি আছে যেগুলো তাপ উৎপাদন করে যেমন পালংশাক,পেয়াজ,রসুন ইত্যাদি খাবারের পরিমানটাও কমিয়ে দেওয়া। অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে করে এই প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।

গরমে হঠাৎ অসুস্থ হলে কি করবেন

গরমে মানবদেহের সমস্যার প্রধান করান হচ্ছে পানি শূন্যতা। তাই বিভিন্ন চিকিৎসকরা বলেছেন পানির পিপাসা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে একটু পর পর পানি পান করা।

তীব্র গরমে হিট ক্র্যাম্প হতে পারে। মানবদেহে পানি ও লবনের এমনটা ঘটতে পারে। এমতাবস্থায় প্রখর রোদ থেকে বেরিয়ে ছায়া বা শীতল স্থানে আবসান করতে হবে। প্রচুর পরিমানে ডাবের পানি ও লেবুর শরবত পান করুন। কাজ হতে বিরত থাকুন। সম্ভব হলে ব্যায়াম করুন।

যত গরম মানব শরীরে তা সামলানো অনেক কঠিন।কেউ এই তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে গেলে প্রথমত তাকে আধাঘণ্টা ঠাণ্ডা স্থানে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। বেশি ঠান্ডা পানীয় পান করতে হবে যেমন লেবুর শরবত,ডাবের পানি ইত্যাদি।

তাপদাহের সময় কি করনীয়

তাপদাহের সময় করনীয় একেবারে সাদামাটা। ঠান্ডা থাকুন আর শরীরকে পানি শূন্য হতে দেবেন না।অতিরিক্ত সূর্যের তাপে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। দিনের বেলায় ঘরের পর্দা টেনে দিন এবং খুব বেশি বেশি পানি পান করুন।

এই প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখতে হলে আপনাকে সবসময়ই হাইড্রেট থাকতে হবে।আসলে গরমের কারনে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে তরল পদার্থ বের হয়ে আসে এসময় যদি আপনি পরিমানমতো পানি পান না করেন তবে শরীরে দেখা দিতে পারে ডিহাইড্রেশন। তাই বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।

নিজের শরীরের উপর অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।যাদের কিডনির সমস্যা,ডায়াবেটিস রয়েছে, রক্তচাও রয়েছে তারা এই সময়টা সচেতনতার সাথে থাকতে হবে। শরীর খারাপ হলে বাইরে কম বের হওয়াটা উত্তম।

হিটস্ট্রোক হলে করনীয় কি

আমরা সবাই জানি মানুবদেহের শরীরের তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট, প্রচন্ড গরম থাকার ফলে মানবদেহের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে হিটস্ট্রোক হয়।

কি করবেন

  • যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে ঠান্ডা জায়গায় নিতে হবে।
  • শরীর  ঠান্ডা কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে দিতে হবে।
  • দেহ ঠান্ডা করার জন্যে কুলিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
  • শরীরের অতিরিক্ত কাপড়-চোপড় সরিয়ে ফেললে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়।
  • স্যালাইন থাকলে রোগীকে খাওয়াতে হবে।
  • যত দ্রুত সম্ভব দেহের তাপমাত্রা কমাতে হবে যার ফলে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
  • খেয়াল রাখতে হবে যেন আক্রান্ত রোগীর শ্বাস-প্রশাস সক্রিয় রয়েছে কিনা প্রয়োজন হলে কৃত্রিমভাবে নাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
  • হিটস্ট্রোক হওয়ার পরে রোগী যদি  অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে পানি জোরপূর্বক না দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
  • সবসময় খেয়াল রাখতে হবে কেউ যদি হিটস্ট্রোক করে তাহলে  যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখার উপায়

এই গরমে কিভাবে নিজের শরীরকে সুস্থ রাখতে হয়-চলুন এ বিষয়ে কিছু টিপস জেনে নেই। গ্রীষ্মকালীন সময়ে অনেক বেশি গরম পড়ে, সেহেতু সুস্থ থাকতে হলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে কারণ পানির কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রসালো ফল খেতে হবে,যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যুক্ত রয়েছে।

খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে সবজি রাখতে হবে এবং তরকারিতেগুলোতে ঝোল রাখতে হবে, এ সময়ে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে আসে । যথা সম্ভব চা এবং কফি পরিহার করতে হবে, কারণ এগুলো আমাদের দেহ অনেক শুষ্ক করে দেয়। প্রচন্ড গরমে সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত লেবুর শরবত এবং বিভিন্ন শরবত বেশি বেশি পান করতে হবে। ডাবের পানিতে রয়েছে আয়োডিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম এজন্য ডাবের পানি খেলে বেশি উপকার হয়।

এছাড়াও প্রতিদিন ব্যায়াম করতে সক্ষম হতে হবে, কেননা ব্যায়াম করলে শরীরের শরীরের শক্তি বৃদ্ধি হয় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াইতে সহায়তা করে। যথা সম্ভব ঢিলেঢালা এবং হালকা রঙের পোশাক পরিধান করতে হবে।

লেখকের শেষকথা

আমাদের কে দৈনন্দিন কাজে বাইরে বের হতেই হচ্ছে। তবে উপরিউক্ত তথ্য গুলি মেনে চললে আশা করছি আমাদের এই গরম থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। আমরা প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখার উপায় - হিটস্ট্রোক হলে করনীয় কি সেই বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।

আশা করছি, আপনারা জেনে উপকৃত হয়েছেন। আপনি যদি সম্পূর্ণ পোষ্টে কোন বিষয়ে বুঝতে না পারেন, তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। তাহলে আমরা আপনাকে সঠিক তথ্য জানিয়ে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখার উপায় এবং হিটস্ট্রোক হলে করনীয় কি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনার ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধু বা প্রিয়জনদের শেয়ার করে দিবেন। এতে অন্যরাও এই পদ্ধতি অবলম্বন করে শরীর সুস্থ রাখতে পারবে। তথ্যবহুল বিভিন্ন স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url