রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থসহ
প্রিয় পাঠক, আপনি কি রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থসহ জানতে চান? বছর ঘুরে এসেছে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। মুসলমানদের জন্য পুরো মাস জুড়ে সিয়াম পালন করা অবশ্যই কর্তব্য। মহান আল্লাহ প্রত্যেক মুসলমানের জন্য রোজা পালন করা ফরজ করেছেন তাই আমাদের প্রত্যেক মুসলমানকে রোজা পালন করতে হবে।
তাই আমাদের রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থসহ জেনে
নেওয়াটাও জরুরি। অনেকে হয়তো আরবি উচ্চারণ জানি কিন্তু এর সঠিক অর্থ অনেকেরই
জানা নেই। আপনি যদি সম্পূর্ণ পোস্ট জুড়ে থাকেন, তাহলে এই সম্পর্কে
সুন্নাহ মোতাবেক বিস্তারিত জানতে পারবেন।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ
উপস্থাপনা
আমরা সকলেই জানি প্রতিটা মুসলমানের উপর রমজান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। রোজা
শব্দের অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা। আর শরীয়তের পরিভাষায় রোজার অর্থ হচ্ছে রোজার
নিয়ত করে সুবহে সাদিক এর পর থেকে একেবারে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার বা রোজা
ভেঙ্গে যায় এমন জিনিস থেকে বিরত থাকা।
আল্লাহ তা'আলা সূরা বাকারার ১৭৩ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করেছেন, “হে মুমিনগণ
তোমাদের উপর রমজান ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা
হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার”।
রোজার নিয়ত, বাংলা উচ্চারণ এবং বাংলা অর্থ
চলুন আমরা প্রথমে রোজার নিয়ত, বাংলা উচ্চারন এবং বাংলা অর্থ জেনে নেই।
সিয়াম পালনে সাহরি ও ইফতারের পাশাপাশি রোজার নিয়তও গুরুত্বপূর্ণ। তবে
এক্ষেত্রে সেহরি খাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে উঠে সেহরি খাওয়াটাই রোজার
নিয়তের অন্তর্ভুক্ত। মূলত, মনের ইচ্ছার নিয়তই রোজার মূল নিয়ত।
কেউ যদি উচ্চারণ করে রোজার নিয়ত না করে, তবুও রোজাগুলো আদায় হয়ে যাবে
ইনশাআল্লাহ। (সূত্রঃ রাদ্দুল মুহতার: ৩/৩৩৯, ৩৪১; আল-বাহরুর রায়েক:
২/৪৫২; আল-জাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ: ১/১৭৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া :
১/১৯৫)।
রোজার নিয়ত
রোজার নিয়ত পড়ার চেয়ে মনে মনে নিয়ত করাটা বেশি জরুরি। আমরা রোজার নিয়তে যেটা
পড়ে থাকি সেটি হাদিস ও ফিকাহের কোনো কিতাবে বর্ণিত হয়নি। তবে কেউ চাইলে
রোজার আরবি নিয়ত পড়তে পারেন।
نَوَيْتُ أَنْ أَصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرٍ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا
لَكَ يا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّي إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيْم
রোজার নিয়তের বাংলা উচ্চারণ
নাওয়াইতু আন আছুমা গদাম-মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক, ফারদাল্লাকা ইয়া
আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
রোজার নিয়তের বাংলা অর্থ
হে আল্লাহ, আমি আগামীকালের জন্য পবিত্র রমজানের রোজা রাখার নিয়ত করছি, আর
এটি আপনার সন্তুষ্টির জন্য ফরজ করা হয়েছে। তাই, আমার পক্ষ থেকে (আমার
পানাহার ও রোজা ভেঙ্গে যায় এমন জিনিস থেকে বিরত থাকাকে) কবুল করুন।
নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
ইফতারের দোয়া, বাংলা উচ্চারণ এবং বাংলা অর্থ
ইফতারের দোয়া আরবি
اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ وَ اَفْطَرْتُ بِرَحْمَتِكَ يَا
اَرْحَمَ الرَّاحِيْمِيْن
ইফতারের দোয়ার বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া
আরহামার রাহিমীন।
ইফতারের দোয়ার বাংলা অর্থ
হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া
রিযিক্বের মাধ্যমে ইফতার করছি।
ইফতারের পূর্বে দোয়ার ফজিলত
ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে রোজাদার ব্যক্তি ক্লান্ত ও শান্ত থাকেন। এটি দোয়া
কবুল হওয়ার উত্তম সময়।বিভিন্ন হাদিস থেকে বর্ণনা পাওয়া যায় যে দোয়া
কবুলের উত্তম সময় হচ্ছে ইফতারের পূর্বে দোয়া করা। এক হাদিসে আছে,
প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, "ইফতারের সময় রোজাদার
ব্যক্তিদের দোয়া নিশ্চয়ই ফিরিয়ে দেওয়া হয় না" (ইবনে মাজাহ,
হাদিস: ১৭৫৩)।
অন্য এক হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, '৩ ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে
দেওয়া হয় না; মুসাফিরের দোয়া, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া এবং রোজাদারের
দোয়া' (বায়হাকি, হাদিস: ৩/৩৪৫)। তাই আমাদের উচিত ইফতারের সামনে বসে
মহান আল্লাহর কাছে মন খুলে দোয়া করা এবং ইফতারের দোয়া পাঠ করে
(আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু) ইফতার খাওয়া।
ইফতারের পর যে দোয়া পড়তে হয়
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, রমজান মাস এতে মানুষের দিশারী এবং সৎ পথের
স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যা-সত্যের পার্থক্যকারী রূপে কোরআন মাজিদ অবতীর্ণ
হয়েছে। তোমাদের মধ্যে যারা রমজান মাস পাবে, তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন
করে।
'হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়াম পালনের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান
তোমাদের পূর্ববর্তীগণ কে দেওয়া হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে
পারো।' (সুরা-২ বাকারা ১৮৫ ও ১৮৩)। সারাদিন রোজা রাখার পরে ইফতারের পর
দোয়া পড়তে হয় আসুন আমরা সেটি জেনে নেই।
আরবি: ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ
اِنْ شَاءَ اللهُ
উচ্চারণ: ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ
ইনশাআল্লাহ।’
বাংলা অর্থ: (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা
সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)
ইফতারের সময় যে কাজগুলো করতে হয়
ইফতারের পর যে দোয়া পড়তে হয় সেটি আমরা জেনে নিয়েছি। এবার চলুন, ইফতারের
সময় যে কাজগুলো করতে হয় সেই বিষয়েও জেনে নেই।
- ইফতারের সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা।
- মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা।
- অন্যেন্য কাজে ব্যস্ত না হয়ে ইফতারের দিকে মনোযোগী হওয়া।
-
ইফতারের শুরুতে খেজুর খেয়ে হালকা পানি পান করে মাগরিবের নামাজ আদায়
করা।
- ইফতারের সময় বেশি ভারি খাবার না খাওয়া। মাগরিবের ওয়াক্তের আগে ইফতার শেষ করা।
- মাগরিবের নামাজ আদায় করে এসে তৃপ্তি অনুসারে খাবার খাওয়া। এতে শরীরও সুস্থ থাকে।
লেখকের শেষকথা
প্রিয় পাঠক, আমরা ইতিমধ্যে রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া আরবি-বাংলা
উচ্চারণ এবং অর্থসহ জেনে নিয়েছি। যাদের রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া জানা ছিল
না তারা আশা করছি জানতে পেরেছেন। তবে উল্লেখ্য বিষয় হচ্ছে মনের ইচ্ছার
নিয়তই রোজার মূল নিয়ত।
রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থসহ আজকের পোষ্টটি আপনার
ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এতে অন্যরাও এই সম্পর্কে বিস্তারিত
জানতে পারবেন। তথ্যবহুল নিত্য নতুন স্বাস্থ্য এবং ইসলামিক সম্পর্কিত
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url