করোসল পাতার উপকারিতা - করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায়
আজকের পোষ্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করব সেটা হচ্ছে করোসল
পাতার উপকারিতা এবং করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে। এই টপিকে
প্রায় অধিকাংশ মানুষই গুগলের কাছে বা ইন্টারনেটের প্লাটফর্মে খোঁজাখুঁজি
করে থাকেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো সঠিক তথ্য জানতে সক্ষম হয়নি। তো আপনি
কি করোসল পাতা সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যাবতীয় তথ্য জানতে
আগ্রহী? তাহলে আপনি এখন সঠিক স্থানেই এসেছেন। কারণ আজকে এই বিষয়ে বিভিন্ন
তথ্য সাজানোর চেষ্টা করেছি।
আপনি যদি আমাদের আজকের পোষ্টের সাথে শেষ অবদি থাকেন, তাহলে করোসল পাতার উপকারিতা
জেনে নেওয়ার পাশাপাশশি এই পাতা কোথায় পাওয়া যায়, এই ফলের পুষ্টি উপাদান এবং
করোসল পাতা খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আজকে আমরা
আপনাকে এই ফলের পাতা সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য দেব যার মাধ্যমে আপনি উপকৃত হতে
পারবেন ইনশাআল্লাহ।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ
উপস্থাপনা
করোসল পাতা আমাদের মানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। করোসল পাতার
আশ্চর্যমূলক স্বাস্থ্য উপকারিতা ছাড়াও এই পাতা খাওয়ার বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের
বৈশিষ্ট্য রয়েছে। করোসল পাতা প্রতিনিয়ত খেলে মাথাব্যথা, ডায়াবেটিস, হাই
প্রেসার, নিদ্রাহীনতা, লিভারের সমস্যা ইত্যাদি বিশেষ করে ক্যান্সার প্রতিরোধে
বেশি ব্যবহার করা হয়।। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকায় দেহের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই এ বিষয়ে গুগলের কাছে জানতে চায়। মূলত তাদের সুবিধার কথা
ভেবে আজকের পোষ্টে করোসল পাতার গুরুত্বপূর্ণ যাবতীয় তথ্য সম্পর্কে
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। তাই অবহেলা না করে সম্পূর্ণ পোস্টটি
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো। তাইলে চলুন আপনার মূল্যবান সময়টুকু আর
অপচয় না করে মূল আলোচনা শুরু করা যাক। আমরা প্রথমে করোসল ফলের কিছু পুষ্টি
উপাদানসমূহ জেনে নেব।
করোসল ফলের পুষ্টি উপাদান
করোসল ফলের মধ্যে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম করোসল ফলে
পুষ্টিগুন বা উপাদানদের পরিমাণ হচ্ছে-
- চর্বি ০.২ গ্রাম
- প্রোটিন ০.৮ গ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ২৩৩ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ১৯ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ২৫০ মিলিগ্রাম
- ফলিক এসিড ১৪ এমসিজি
- ভিটামিন সি ১৯ মিলিগ্রাম
- এনার্জি ৬৪ ক্যালরি
- ফাইবার ১.৮ গ্রাম)
- কার্বোহাইড্রেট (১৫.৩ গ্রাম)
- ক্যালসিয়াম (৪০ মিলিগ্রাম) ইত্যাদি।
করোসল পাতার উপকারিতা
এ পর্যায়ে আমরা করোসল পাতার উপকারিতা জেনে নিব। করোসল পাতা ভেষজ ঔষধ
হিসেবে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। যেমন মাথাব্যথা, ডায়াবেটিস, হাই
প্রেসার, নিদ্রাহীনতা, লিভারের সমস্যা ইত্যাদি বিশেষ করে ক্যান্সার
প্রতিরোধে বেশি ব্যবহার করা হয়। করোসল পাতার উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা
হলো-
- পেট পরিস্কার হয়
- ঘুম পরিপূর্ণ হয়
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
- মানসিক চাপ কমায়
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়
- চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে
- ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে
- রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে
- এছাড়াও জ্বর, কাশি, হজমের সমস্যা, হাঁপানি, পেটে ব্যথা ইত্যাদি নানান সমস্যা দূর হয়ে থাকে ইত্যাদি।
করোসল পাতা খাওয়ার নিয়ম
প্রতিটা খাদ্যের পরিপূর্ণভাবে উপকারিতা পেতে হলে সেই খাবার খাওয়ার সঠিক
নিয়ম জানতে হবে। করোসল পাতা তার বিপরীত নয়। আপনি যদি সঠিক নিয়মে করোসল
পাতা খেতে পারেন তাহলে আশা করছি, পরিপূর্ণভাবে এর উপকারিতা পাবেন। করোসল
পাতা খাওয়ার নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো-
করোসলের পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খাবেন তাহলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে। চা
বানানোর পদ্ধতি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম করোসল পাতা ও ১ লিটার বিশুদ্ধ
পানি নিতে হবে। এরপর একটি পাত্রে পানি গরম করতে হবে। তারপরে ফুটন্ত
পানিতে করোসল পাতাগুলো দিতে হবে। এরপর একটি মাপ অনুযায়ী একটি ঢাকনা দিয়ে
ঢেকে রাখুন।
আনুমানিক ১০ মিনিট ফুটানোর পরে খেয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে এটি ঠাণ্ডা করেও
খেতে পারেন। প্রতিদিন খাবার খাওয়ার আধা ঘন্টা পর ১ কাপ করে খেতে হবে। তবে
মনে রাখবেন, গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের থেকে এটি এড়িয়ে চলতে হবে।
প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
করোসল যেভাবে কাজ করে
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা গুগলের কাছে জানতে চাই করোসল কিভাবে কাজ
করে? এই প্রশ্নের উত্তর নিম্নে আলোচনা করা হলো।
করোসলের ৫ থেকে ৬টি পাতা ভালোভাবে কুচি করে কেটে নিয়ে চায়ের মতো করে
খাওয়া যায়। আবার আস্ত তাজা পাতা চা বানিয়েও খাওয়া যায়। এছাড়া পাকা ফল
ঠাণ্ডা পানিতে সরবত বানিয়ে খেতে পারেন। আবার অনেকেই কাঁচা অবস্থাতেও খেয়ে
থাকেন।
করোসল গাছে এক ধরনের যৌগ রয়েছে যার নাম হচ্ছে অ্যানোনাসিয়াস
অ্যাস্টোজেনিন। এই যৌগ ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি থামিয়ে দেয়। যার ফলে
ক্যান্সার কোষ আর বেড়ে উঠতে সক্ষম হয় না। এছাড়া আপনি যদি নিয়মিত এই ফল
খেতে পারেন, তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে বেড়ে
যাবে। করোসল ফল এইভাবেই আমাদের শরীরের উপকারের কাজ করে থাকে। আশা করছি,
পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
করোসল ফলের অপকারিতা
প্রতিটা খাদ্যে উপকারিতা থাকার পাশাপাশি অতিমাত্রায় খাওয়ার ফলে সামান্য
পরিমাণ হলেও সেই খাদ্যের অপকারিতা বিরাজ করে। করোসল তার বিপরীত নয়। করোসল
ফলের বেশ কয়েকটি অপকারিতা রয়েছে যেগুলো জেনে নেওয়াটা জরুরি। করোসল ফলের
অপকারিতা হচ্ছে-
- অতিমাত্রায় খাওয়ার ফলে কিডনিজনিত সমস্যা হতে পারে
- এই ফলের বীজে এক ধরণের টক্সিন রয়েছে যেগুলো অনেকের দেহে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার প্রভাব দেখা দিতে পারে।
- আবার যারা নিয়মিত লো প্রেসারে ভুগেন তাদের ক্ষেত্রে রক্ত চাপ আরও কমে যেতে পারে।
- এছাড়াও যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত কিংবা হাই প্রাসারের মেডিসিন সেবন করেন তারা যদি এই ফল বা পাতা খায় তাহলে ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া তৈরি করে দেহের রক্তের শর্করার মাত্রা অনেক গুনে কমিয়ে দিতে পারে।
- আর যারা গর্ভবতী মহিলারা রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে করোসল ফল বা পাতা কতটুকু কার্যকর বা একটি খেলে কার্যকর হবে কিনা তা এপর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। তাই তাদের গর্ভকালীন সময়ে এই ফল বা পাতার না খাওয়াই উত্তম।
আশা করি করোসল ফলের অপকারিতাগুলো জানতে সক্ষম হয়েছেন। এবার চলুন,
করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে জেনে নিই।
করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায়
আপনারা এতক্ষণে হয়তো করোসল পাতার উপকারিতা, এই পাতা কিভাবে কাজ করে সেই
বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নিয়েছেন। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে এই
করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায় বা এই করোসল ফলের গাছ আমাদের দেশে কোথায়
চাষাবাদ হয়।
বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি জায়গায় করোসল ফল এর চাষ করা হয়।
তবে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই গাছ প্রচুর পরিমাণে চাষ
করা হয়ে থাকে। মূলত ভারত থেকেই আমাদের বাংলাদেশে বেশি আমদানি করা হত।
কিন্তু বর্তমানে আমাদের সিলেট, চট্টগ্রাম রাজশাহী, ঢাকাসহ বরিশালের
বিভিন্ন জেলাগুলোতে এই ফল চাষ করা করা হচ্ছে।
এছাড়া এই গাছ আপনার বাড়ির আঙ্গিনাতেও পেতে পারেন। শুধু একটু চোখ-কান খোলা
রেখে খুজতে হবে। তাহলে দেখবেন আপনাকে টাকা দিয়ে কিংবা এক জেলা থেকে অন্য
জেলায় গিয়ে এই ফলের পাতা সংগ্রহ করা লাগবে না। তবে এখন অনেকেই অনলাইনে
করোসল ফল বা এর পাতা বিক্রি করে থাকেন। অনলাইন থেকেও আপনি কালেক্ট করতে
পারেন।
লেখকের শেষ মন্তব্যঃ করোসল পাতার উপকারিতা
পরিশেষে এ কথা বলে শেষ করব যে, আপনি যদি নিয়মিত করোসল পাতা নিয়ম অনুযায়ী
খেতে পারেন, তাহলে অবশ্যই আপনার দেহের জন্য উপকারে আসবে। তো বন্ধুরা আমি
ইতিমধ্যে করোসল পাতার পাতার উপকারিতা ও করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায়সহ
করোসল পাতা সম্পর্কিত আরো গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি, আপনারা এই করসল পাতা
সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
আপনারা হয়তো এতক্ষণে করোসল পাতার উপকারিতা এবং করোসল পাতা কোথায় পাওয়া
যায় জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। আপনি যদি এই পোষ্টের কোনো অংশ বা বিষয়ে
বুঝতে না পারেন, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। তাহলে, সঠিক
তথ্য দিয়ে আপনাকে সাহায্য করব।
করোসল পাতার উপকারিতা ও করোসল পাতা কোথায় পাওয়া যায় এই সম্পর্কে
আমাদের আজকের ব্লগটি আপনার কাছে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার
করবেন। এতে তারাও উল্লিখিত বিষয়গুলো জানতে পারবেন। এমন স্বাস্থ্য
উপকারিতা সম্পর্কিত রেগুলার বিভিন্ন টিপস পেতে ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ে পোষ্ট পড়তে আমাদের সাইটের সাথেই থাকুন।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url